ইন্টারনেটের ধীরগতি সমাধানের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রিটের শুনানি আগামি সপ্তাহে। গতকাল বুধবার এ তথ্য জানান রিটকারীদের আইনজীবী ইশরাত হাসান। তিনি বলেন,গত ১২ জানুয়ারি আমরা রিটটি ফাইল করেছি। আগামি সপ্তাহে এটির শুনানি হতে পারে। রিটে মোবাইল ফোনের দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের ধীরগতি সমস্যার সমাধান করে গুণগতমান সম্মত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। গ্রাহকদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইন্টারনেটের গতি সেবা দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে কি কারণে ইন্টারনেটের এই ধীরগতি তা অনুসন্ধানে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষকের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর পরও ইন্টারনেটের গতি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত না হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না-এই মর্মে রুল নিশি চাওয়া হয়েছে।
রিটের আবেদনে বলা হয়, দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের ধীর গতির কারণে মোবাইল ফোন গ্রাহকরা মারাত্মক ভোগান্তিতে রয়েছেন। গ্রাহকের কাছ থেকে যে পরিমাণ খরচ নেয়া হয়, সে তুলনায় সেবার মান হতাশাব্যঞ্জক। মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো সে অনুযায়ী সেবা দিচ্ছে না। এতে গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রতারিতও হচ্ছেন। ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ী ডিজিটাল সেবার মান নিশ্চিতকরকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তালিকার শেষ দিকে রয়েছে।
অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, দেশে ইন্টারনেটের গতি এতটাই দুর্বল যে, অনেক জায়গায় মানুষ ইন্টারনেটের সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমাদের যে টাকা দিয়ে নেট কেনা হয়,তার মেয়াদ শেষ হলে আর ব্যবহার করা যায় না। এই নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবহার করতে না পারার অন্যতম কারণ হলো ধীরগতি। এ ব্যাপারে বছরে সাড়ে ৫ লাখ অভিযোগ জমা হয় বিটিআরসিতে। এরপরও এ বিষয়ে কোনও সমাধান না পাওয়ায় এ রিটটি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য,ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে গ্রাহক ভোগান্তির অন্ত নেই। রাজধানীতে ইলেকট্রিক ক্যাবল পোস্টে ইন্টারনেট তারের জট। যা রাজধানীবাসীর জন্য বিড়ম্বনার কারণ। এই বিড়ম্বনা মুখ বুঁজে সহ্য করলেও ইন্টারনেটের কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না মানুষ। ঝুলন্ত তারের পরিবর্তে ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) ফাইবার অপটিক্যাল ব্যবহার করার দাবি উঠলেও সেদিকে ভ্রক্ষেপ নেই মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর। ইন্টারনেটের ধীরগতির বিষয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে গ্রাহকরা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনে (বিটিআরসি) সুুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানিয়েও কোনো ফল পান না। ভোগান্তির শিকার গ্রাহকদের অন্তত: সাড়ে ৫ লাখ অভিযোগ জমা পড়ে আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কাছে। অভিযোগ রয়েছে,প্রতিষ্ঠানটির কর্তা ব্যক্তিদের দুর্নীতি, মোবাইল অপারেটদের সঙ্গে গোপন সমঝোতার কারণেই গ্রাহক ভোগান্তির সমাধান হচ্ছে না। বরং গ্রাহক ভোগান্তির অভিযোগগুলোকে পুজি করে অপারেটরদের কাছে ব্যক্তিগত ফায়দা লুটছেন। গ্রাহক ভোগান্তির অভিযোগ নিষ্পত্তির কোনো উদ্যোগ সংশ্লিষ্টরা নিচ্ছেন না।
যদিও প্রতিষ্ঠানটি মুখে মুখে বলছে যে, লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী সার্ভিস প্রোভাইডাররা গ্রাহকদের প্রতিশ্রুত সেবা অবশ্যই দিতে হবে। তবে যদি কোন গ্রাহক তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেবা না পায় তাহলে বিটিআরসিতে অভিযোগ করতে পারে। কিন্তু অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার না মেলে না। করোনা প্রকোপের কারণে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে কয়েকগুণ। শিক্ষা,স্বাস্থ্য,বাণিজ্য সবকিছুই পরিচালিত হচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। মানুষ ঘরে বসেই কেনাকাটা করছেন। অফিস পরিচালনা করছেন। টেলি মেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসাও নিচ্ছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যুক্ত হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। করোনা-বাস্তবতায় ইন্টারনেট এখন আর কোনো বাড়তি সুবিধা হিসেবে বিবেচিত নয়। হয়ে উঠেছে অত্যাবশ্যকীয় উপকরণে। এ অবস্থায় সারাদেশে যেখানে ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর চেষ্টা থাকা প্রয়োজন সেখানে বেড়েছে ভোগান্তি। ইন্টারনেটের গতি এবং সেবার মানে অবনতি ঘটেছে। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যম বহু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইন্টারনেট সেবার নাম সম্পর্কে বিটিআরসিতে অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার না পেয়ে তিন গণমাধ্যম কর্মী বাদী হয়ে অগত্যা জনস্বার্থে এ রিট করেন। সংক্ষুব্ধ হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ,মো.মাহদী হাসান ডালিম এবং মো.রাশিদুল হাসান রিটের মাধ্যমে প্রতিকার চেয়েছেন উচ্চ আদালতের কাছে।