বুধবার ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তবে কট্টরপন্থী ট্রাম্প সমর্থকরা এখনই শান্ত হচ্ছেন না। ডানপন্থী বিক্ষোভকারীরা ঘটনাটিকে বিদ্রোহের সূচনা হিসেবে অভিহিত করছেন।
কট্টর ডানপন্থীদের পরিচালিত ওয়েবসাইট ‘পার্ল’-এ এক সমর্থক লিখেন, ‘দেশের স্বার্থে ১৯ জানুয়ারি অস্ত্র হাতে আমরা আবারও নামব। এবারের আন্দোলনের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে পুরো বিশ্ব।’
তিনি আরও লিখেন, ‘এবার আমরা এতটাই শক্তিশালী হয়ে নামব যে নিরাপত্তা সংস্থা, সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ সদস্যরা মিলেও আমাদের থামাতে পারবে না।’
সোশ্যাল মিডিয়া এখন ১৯ তারিখের বিক্ষোভ সমাবেশকেন্দ্রিক নানা পোস্টে সয়লাব। বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আগে ক্যাপিটল হিল এবং অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের রাজধানীতে ‘সশস্ত্র পদযাত্রা’র আহ্বান জানিয়ে পোস্টগুলো করা হচ্ছে। অনেক পোস্টে সরাসরি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দিন সহিংসতার কথাও ছড়ানো হচ্ছে।
অন্যদিকে, এ রকম এক পোস্টে জো বাইডেনকে হোয়াইট হাউসে ঢুকতে বাধা দেওয়ার জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে জমায়েতের আহ্বান জানানো হয়।
ভার্চুয়াল পরিসরে এসব হুমকি ক্যাপিটল হিলের চেয়েও বড় কোনো সহিংসতার ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না, তা এখনো অস্পষ্ট। কিন্তু ট্রাম্প সমর্থকদের হাল ছাড়তে না দেখে কংগ্রেসের সদস্যরা এখন চিন্তিত। সামনের দিনগুলোতে বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়লে তা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেই উত্তরই এখন খুঁজছেন আইনপ্রণেতারা।
ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট রিপ্রেজেন্টেটিভ রাজা কৃষ্ণমূর্তি এনপিআরের সাপ্তাহিক সংস্করণের এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘৬ জানুয়ারির ঘটনা বিক্ষোভের সূত্রপাত মাত্র। আমাদের এখন সতর্ক হওয়া উচিত।’ ক্যাপিটল হিলের বাইরে যে এত মানুষ জড়ো হবে, তা কল্পনা করতে পারেননি বলেও জানান কৃষ্ণমূর্তি।
‘ট্রাম্প এই বিশাল গোষ্ঠীকে বিক্ষোভের জন্য উসকে দিতে পারে। তবে আমাদের এখন সমস্ত সম্ভাবনা এবং আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। গণতন্ত্র বজায় থাকবে। তবে আমাদের এই মুহূর্তে যেকোনো মূল্যে সংবিধান এবং দেশকে রক্ষা করতে হবে।’
ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, ক্যাপিটল হিলের বিক্ষোভকারীদের ভোট বানচালের বাইরেও আইনপ্রণেতার হত্যার উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা নিয়ে তদন্তে নেমেছে এফবিআই।
বিক্ষোভকারীদের একজন পুলিশের দিকে তাকিয়ে পেলোসিকে বাজে ভাষায় আক্রমণ করেন এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। আরেক বিক্ষোভকারী মাইক পেন্সকে ফাঁসিতে ঝুলানোর দাবি তোলেন।
বুধবারের সহিংসতায় পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হন। কৃষ্ণমূর্তির মতো কংগ্রেসের অন্যান্য সদস্যরাও এখন পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত।
সাইবার নজরদারির প্রতিষ্ঠান এলেথিয়া গ্রুপের বিশ্লেষণ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সিনডি ওটিস এনপিআরকে বলেন, ‘যেসব অনলাইন গোষ্ঠী বুধবারের সহিংসতাকে সমর্থন করেছে, তারা এখন ক্যাপিটল হিলের ঘটনাকে আসন্ন গৃহযুদ্ধ আর বিপ্লবের সূচনা বলে দাবি করছে।’
সিআইএ’র প্রাক্তন বিশ্লেষক ওটিস আরও বলেন, ক্যাপিটল ভবনকে সহজে দখল নেওয়া কট্টরপন্থী দলগুলোকে সাহস জুগিয়েছে। তারা এখন জানে, চাইলেই শত্রুপক্ষের রাজনীতিবিদদের কাছে সহজে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব।’
অ্যান্টি ডিফেমেশন লিগের সিইও জোনাথন গ্রিনব্ল্যাট সিএনএনকে জানান, অনলাইনে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের ওপর নজরদারির সময় তারা ক্যাপিটলের ঘটনায় অনেককেই উৎসাহিত হতে দেখেছেন। একজন লিখেছেন, ‘সবকিছু শান্ত হয়ে পড়ার আগেই বিদ্রোহের আগুন ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ুক।’
কংগ্রেস সদস্যদের অনেকেই এখন সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন। ফ্লোরিডায় গ্রেপ্তারকৃতদের শাস্তি ও জরিমানা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন ফ্লোরিডার আইনপ্রণেতারা।
ফ্লোরিডার রিপ্রেজেন্টেটিভ স্পিকার ক্রিস স্প্রাউলস ফক্স নিউজকে বলেন, ‘পুলিশ সদস্যকে আহত করলে ছয় মাসের জন্য কারাগারে যেতে হয়। অন্যদিকে, দাঙ্গার সময় কেউ আটক হলে কারাগারে শুধু রাত কাটালেই চলে।’
নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের মাঝেই ২০ তারিখ শপথ গ্রহণ করতে চলেছেন জো বাইডেন। অভিষেক অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এক সিনিয়র কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘আমরা আমাদের নিরাপত্তাকর্মী ও সদস্যদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। তারা মাসের পর মাস ধরে অভিষেক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করে আসছেন। প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে আমরা নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
- সূত্র: এনআরপি