কভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মহার অবিশ্বাস্যরকম কমে গেছে। ফলে দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মোট জনসংখ্যাও কমেছে।
স্বরাষ্ট্র ও নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, ২০২০ সালে দেশটিতে জনসংখ্যা প্রায় ২১ হাজার কমে ৫ কোটি ১৮ লাখ হয়েছে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ কোরীয়দের জন্মহার আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ কমেছে। তার মানে বিশ্বের সবচেয়ে কম জন্মহারের দেশটিতে মহামারীর মধ্যে সন্তানধারণ আরো কমেছে।
মহামারীর মধ্যে কর্মসংস্থান এবং উপার্জন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই বিয়ে এবং সন্তানধারণ পিছিয়ে দিচ্ছেন। গত মাসে ব্যাংক অব সাউথ কোরিয়া এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, এতে করে দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা আরো বেড়ে যাচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার নীতি নির্ধারকরা বেশ কয়েক বছর ধরেই জন্মহার বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এর জন্য মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং বিনামূল্যে শিশুসেবা ইত্যাদি প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। তবে পছন্দমতো চাকরি না পাওয়ায় বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেরিতে বিয়ে করা এবং কম সন্তান নেয়ার প্রবণতা রয়েছে। সিউল ইয়োনসেই ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সুং তায়ে ইয়ুনের পর্যবেক্ষণটি এরকমই।
তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে সাধারণত যে গতিতে থাকে, বর্তমানে সেভাবে চলছে না। এখানে বেশ রক্ষণশীল মজুরি ব্যবস্থা যেখানে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বেতন ভাতা বৃদ্ধি এবং পদপদবি দেয়া হয় এই ব্যবস্থার কারণে চাকরিদাতারা নতুনদের চাকরি দিতে চায় না।
কুড়ির দশকে দক্ষিণ কোরিয়ায় বেকারের হার ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি সব বয়সীদের মধ্যে এই হার ৪ শতাংশের মধ্যে থাকছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি গতকাল রোববার প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, পরিবারের আকার দিন দিন ছোট হচ্ছে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা কমতে কমতে গড়ে ২ দশমিক ২৪-এ নেমে এসেছে। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশই একা থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজকল্যাণ ও আবাসন নীতিতে আরো গুরুত্ব দিতে হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬০ বছর ও তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা এখন মোট জনসংখ্যার ২৪ শতাংশ। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে, ফলে অর্থনীতি ক্রমেই চাপে পড়ছে। বিশেষ করে যখন সরকারের বেশিরভাগ ব্যয় এখন মহামারীকেন্দ্রিক হয়ে গেছে।
অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়াতে এখন ঋণ অনুপাত বেশ কম। কিন্তু এই অনুপাত যে হারে বাড়ছে তা দিন দিন সরকারের নীতি নির্ধারকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মুন জায়ে ইনের প্রশাসন এই ঋণ অনুপাত সামলাতে ঋণ গ্রহণে লাগাম টানতে পার্লামেন্টকে চাপ দিচ্ছে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ