দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ায় এক হিন্দু দেবতার মূর্তি ভাঙার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। একইসঙ্গে এই ঘটনাটিকে ‘অসম্মানজনক’ আখ্যা দিয়ে কড়া নিন্দাও জানিয়েছে দেশটি। চলমান থাই–কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘাতের মধ্যে মূর্তি ভেঙে ফেলার এই ঘটনা ঘটে। নয়াদিল্লি বলেছে, এমন কাজ বিশ্বের কোটি ভক্তের অনুভূতিতে আঘাত করে, এ ধরনের ঘটনা ঘটা উচিত নয়। একইসঙ্গে দুই দেশকে সংলাপ ও কূটনীতির পথে ফিরে আসার আহ্বানও জানিয়েছে ভারত। খবর এনডিটিভি
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত এক হিন্দু ধর্মীয় দেবতার মূর্তি ধ্বংসের খবর আমরা দেখেছি। এটি এমন এক এলাকায় ছিল, যা নিয়ে বর্তমানে থাই–কম্বোডিয়া সীমান্ত বিরোধ চলছে’। তিনি বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবদেবীদের গভীর শ্রদ্ধায় পূজা করেন, এগুলো আমাদের ‘সমন্বিত সভ্যতা-সংস্কৃতির’ অংশ।
দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ভারত বলেছে, সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে উত্তেজনা কমাতে হবে, প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি ঠেকাতে শান্তির পথ বেছে নিতে হবে। জুলাইয়ে শুরু হওয়া সংঘাতটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হলেও এ মাসে আবারও শুরু হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক্সকাভেটর দিয়ে হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর সেই মূর্তি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এএফপির খবরে বলা হয়, প্রিয়া ভিহেয়ার প্রদেশের মুখপাত্র লিম চানপানহা জানান, মূর্তিটি কম্বোডিয়ার আন সেস এলাকায় দেশের ভেতরেই অবস্থিত ছিল। ২০১৪ সালে নির্মিত ওই বিষ্ণুমূর্তি গত সোমবার ধ্বংস করে ফেলা হয়। এটি থাইল্যান্ড সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে ছিল।
চানপানহা বলেন, ‘বৌদ্ধ ও হিন্দুদের কাছে পবিত্র যে সব প্রাচীন মন্দির ও প্রতিমা রয়েছে সেগুলো ধ্বংসের আমরা নিন্দা জানাই।’
প্রসঙ্গত, দুই প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত নিয়ে এ বিবাদ নতুন নয়। আসলে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার দ্বন্দ্বের ইতিহাস শত বছরেরও বেশি পুরোনো যা শুরু হয়েছিল ফরাসি দখলদারিত্বের পর সীমান্ত নির্ধারণের সময়। ২০০৮ সালে দুই দেশের বিরোধ আনুষ্ঠানিকভাবে তীব্র হয়। সেসময় কম্বোডিয়া বিতর্কিত অঞ্চলে থাকা একাদশ শতকের একটি মন্দিরকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে নিবন্ধনের চেষ্টা করে। থাইল্যান্ড সেই চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
বছরের পর বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে উভয় পক্ষের সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। সর্বশেষ উত্তেজনা শুরু হয় মে মাসে, সেসময় সংঘর্ষে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয়। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্ক এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়।
চলতি বছরের জুলাইয়ের সংঘর্ষের আগে উভয় দেশই একে অপরের ওপর সীমান্তে নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। কম্বোডিয়া থাইল্যান্ড থেকে ফল ও সবজি আমদানি বন্ধ করে দেয়, পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা নেয়াও বন্ধ করে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সীমান্তে উভয় দেশই সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছিল।

