যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপক হারে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামরিক অভ্যুত্থান ও ভয়াবহ সংঘাতে জর্জরিত আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি দেশে অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব অ্যাজেন্ডা এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা সংকটে পড়বে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন আফ্রিকায় ব্যাবসা-কেন্দ্রিক কূটনীতি বাস্তবায়নে কাজ করছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার ‘সহায়তা’ থেকে সরে ‘বাণিজ্য’-এ স্থানান্তর করা হয়েছে। ট্রাম্প শান্তি চুক্তি মধ্যস্থতা ও বিরল খনিজ (রেয়ার-আর্থ) সংক্রান্ত চুক্তি করতে আগ্রহী হয়েছেন এবং সরাসরি বৈদেশিক সহায়তা দেয়ার পরিবর্তে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন করেছেন।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের চেয়ে আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য একটি ভালো অংশীদার হিসেবে তুলে ধরেছে বলেছেন, আফ্রিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও জোরদার করতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চীন যেখানে ক্রমেই অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়িয়েছে, সেখানে আফ্রিকা মহাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র অবহেলা করছে—এই ধারণা মোকাবিলায় ধারাবাহিক মার্কিন প্রশাসনগুলোর সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই তিনি এ বক্তব্য দেন।
সাম্প্রতিক একাধিক শাসন আমল ধরেই আফ্রিকাজুড়ে মার্কিন দূতাবাসগুলো এবং ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টের আফ্রিকা ব্যুরোতে দীর্ঘদিন জনবল সংকট রয়েছে। তবে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ১৩ জন মিশনপ্রধানকে অপসারণ করায় এ অঞ্চলে শীর্ষ পর্যায়ের শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় ৩০-এ গিয়ে দাঁড়াবে। সাবেক কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এত বড় শূন্যতা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিতে অনিবার্যভাবেই প্রভাব ফেলবে।
আফ্রিকাবিষয়ক সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা ক্যামেরন হাডসন বলেন, শীর্ষ দূতদের প্রত্যাহার ট্রাম্পের ‘ব্যক্তিগত শৈলী’-কেই প্রতিফলিত করে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মধ্যে শান্তিচুক্তিতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন এবং নাইজেরিয়ায় ‘খ্রিস্টান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়’ পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে হাডসনের মতে, এই দৃষ্টিভঙ্গি কূটনীতি ও সম্পৃক্ততার মূল উদ্দেশ্যকেই এড়িয়ে যায় এবং কূটনীতিকদের মনোভাব ও স্বার্থ গঠনের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে।
ট্রাম্পের ধারণা—‘তার রাষ্ট্রদূতদের প্রয়োজন নেই, কারণ তিনি নিজেই ৫৪টি আফ্রিকান দেশের সঙ্গেও সম্পর্ক পরিচালনা করছেন।’
ট্রাম্প নিজে ছাড়াও, তার কন্যা টিফানির শ্বশুর এবং আরব ও আফ্রিকাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মাসাদ বুলস কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি সুদানের যুদ্ধ অবসানেও সহায়তার চেষ্টা করেছেন। নেতৃত্বের শূন্যতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফ্রিকায় মনোযোগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি বারবার দিলেও তার মেয়াদে মহাদেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমেছে। ওয়াশিংটন সাহেল অঞ্চলে একটি সামরিক ঘাঁটি হারিয়েছে এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত খনিজ খাতে চীনের বাণিজ্যিক আধিপত্য ভাঙতে তেমন অগ্রগতি হয়নি।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে স্টেট ডিপার্টমেন্টে আফ্রিকাবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা টিবর নাজি বলেছেন, ট্রাম্পের উচ্চপর্যায়ের সম্পৃক্ততা ও বুলসের ভূমিকা সত্ত্বেও, পরবর্তী কাজগুলো শেষ পর্যন্ত দূতাবাসগুলোর ওপরই পড়ে। তিনি বলেন, শূন্যপদের সংখ্যা ‘অত্যন্ত বেশি’, যদিও তিনি স্বীকার করেন—এ মূল্যায়ন তথ্যের চেয়ে তার ব্যক্তিগত ধারণার ওপর বেশি নির্ভরশীল।
বিদেশের মিশনগুলোর পাশাপাশি, স্টেট ডিপার্টমেন্টের আফ্রিকা ব্যুরোর নেতৃত্বেও পরিবর্তন আসছে; আফ্রিকাবিষয়ক সিনিয়র ব্যুরো কর্মকর্তা জোনাথন প্র্যাট অবসর নিচ্ছেন। রয়টার্সের দেখা এক ইমেইলে প্যাট কর্মীদের জানান, দায়িত্ব নেয়ার সময় তিনি বছরের শেষ পর্যন্ত এ পদে থাকার বিষয়ে সম্মত হয়েছিলেন।
তিনি লেখেন, ‘ঐতিহাসিকভাবেই জনবল সংকট থাকলেও, এএফ ব্যুরো সবসময়ই কাজ চালিয়ে গেছে…’।

