শীত এলেই বাজার ভরে যায় টাটকা ফুলকপিতে। ঘরে ঘরে হয় ফুলকপি ভাজি, তরকারি, পরোটা কিংবা ঝাল ঝাল আলু–ফুলকপির ঝোল। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই সবজি স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের প্রথম পছন্দগুলোর একটি। কিন্তু ফুলকপি খাওয়ার পর যদি হঠাৎ পেট ভারী লাগা, গ্যাস বা অস্বস্তি অনুভব করেন তাহলে আপনি একা নন। অনেকেই জানেন না, অতিরিক্ত বা ভুলভাবে ফুলকপি খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ফুলকপির একটি সাধারণ কিন্তু অবহেলিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
ফুলকপি ও হজমের সম্পর্ক
ফুলকপি মূলত ক্রুসিফেরাস সবজি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এই দলে ব্রকলি, বাঁধাকপি ও ব্রাসেলস স্প্রাউটসও রয়েছে। এসব সবজিতে প্রচুর ফাইবার, ভিটামিন কে, ফোলেট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকলেও এগুলো হজম করা তুলনামূলক কঠিন বিশেষ করে কাঁচা অবস্থায়।
ফুলকপি বেশি পরিমাণে খেলে বা কাঁচা খেলে অনেকের পেটে গ্যাস, ফাঁপা ভাব কিংবা অস্বস্তি তৈরি হয়। কারণ, এই সবজিতে থাকা কিছু উপাদান আমাদের হজমতন্ত্র সহজে ভাঙতে পারে না।
কেন ফুলকপি খেলে গ্যাস হয়
ফুলকপি ও অন্যান্য ক্রুসিফেরাস সবজিতে থাকে রাফিনোজ নামের এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট। আমাদের শরীরে এই রাফিনোজ ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম নেই। ফলে এটি হজম না হয়ে সরাসরি পরিপাকতন্ত্রের শেষ অংশ বৃহদান্ত্রে পৌঁছে যায়। সেখানে অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া রাফিনোজকে ফারমেন্ট করে, যার ফলে তৈরি হয় গ্যাস ও পেট ফাঁপার সমস্যা। শুধু তাই নয়, ফুলকপিতে থাকা সালফারযুক্ত যৌগ গ্লুকোসিনোলেটস ভেঙে গিয়ে হাইড্রোজেন সালফাইড তৈরি করে, যা ফুলকপি খাওয়ার পর অস্বস্তিকর গন্ধযুক্ত গ্যাসের কারণ হয়।
তাহলে কি ফুলকপি খাওয়া বন্ধ করা উচিত
একদমই না। বরং সঠিকভাবে এবং পরিমিত পরিমাণে খেলে ফুলকপি অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। গবেষণায় দেখা গেছে, টাটকা ফুলকপিতে তুলনামূলকভাবে বেশি প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। কাঁচা ফুলকপিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বেশি হলেও রান্না করলে এতে থাকা ইন্ডোল নামের উপকারী উপাদান বেড়ে যায়।
তবে যাদের হজমের সমস্যা বেশি, তাদের জন্য কাঁচা ফুলকপি না খেয়ে হালকা সেদ্ধ বা রান্না করা ফুলকপি খাওয়াই ভালো। পাশাপাশি অতিরিক্ত সিদ্ধ না করে ভাপ দিয়ে বা অল্প তেলে রান্না করলে পুষ্টিগুণও বজায় থাকে।
ফুলকপি যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনি অতিরিক্ত বা ভুলভাবে খেলে তা অস্বস্তির কারণও হতে পারে। পেট ফাঁপা, গ্যাস বা ভারী লাগার মতো সমস্যাগুলো আসলে শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া যা খাবারের ধরন ও পরিমাণের ওপর নির্ভর করে।
তাই ফুলকপি একেবারে বাদ না দিয়ে, পরিমিত পরিমাণে ও সঠিকভাবে রান্না করে খাওয়াই হলো সবচেয়ে বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত। কারণ, সচেতনভাবে খেলে খাবারই হতে পারে ওষুধ আর অবহেলা করলে সেটাই অস্বস্তির কারণ।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

