২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আগে ফিফার টিকিট রিসেলিং ব্যবস্থাপনা নিয়ে উঠেছে বড় ধরনের প্রশ্ন। বিশ্বকাপের অফিসিয়াল রিসেল মার্কেটপ্লেসে টিকিট বিক্রি করা বহু দর্শক এখনও তাদের প্রাপ্য অর্থ পাননি।
কেউ কেউ হাজার হাজার পাউন্ড নিয়ে দুই মাসের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছেন। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি স্পোর্টের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই খবর।
ফিফার নিজস্ব নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, কোনো টিকিট রিসেলের পর সর্বোচ্চ ৬০ ক্যালেন্ডার দিবসের মধ্যে বিক্রেতার অর্থ পরিশোধ করার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অক্টোবরের শুরুতে যারা টিকিট বিক্রি করেছিলেন, তাদের একটি অংশ এখনও টাকা হাতে পাননি।
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়লেও ফিফা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দিতে রাজি হয়নি।
বিবিসি স্পোর্টের তথ্য অনুযায়ী, বিলম্বের মূল কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে ব্যাংকিং জটিলতা। ফিফার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কিছু টিকিট বিক্রেতার কাছে অতিরিক্ত ব্যাংক তথ্য চাওয়া হয়েছে। যা না পাওয়া পর্যন্ত অর্থ ছাড় করা যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
অথচ এর আগে ফিফা জানিয়েছিল, টিকিটের অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্রেতার মূল পেমেন্ট কার্ডেই ফেরত যাবে।
যেসব টিকিট নিয়ে এই জটিলতা তৈরি হয়েছে, সেগুলো ছিল সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত ১০ দিনের প্রি-সেল ড্রয়ের অংশ। ওই ধাপে প্রায় ১০ লাখ টিকিট বাজারে ছাড়ে ফিফা। যেখানে ভিসা কার্ডধারীরাই কেবল আবেদন করতে পেরেছিলেন।
তবে ঠিক কতজন সমর্থক এই অর্থপ্রদানের সমস্যায় পড়েছেন, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা জানা যায়নি।
ইংল্যান্ডের সমর্থক ইয়ান জানান, কানাডার টরন্টোতে আয়োজিত উদ্বোধনী ম্যাচের একটি টিকিট তিনি ৬৫ দিন আগে বিক্রি করেছিলেন। সেই টিকিট বাবদ প্রায় ৬৫০ পাউন্ড এখনও পাননি তিনি।
ইয়ান বলেন, ‘এই বিশ্বকাপ থেকে ফিফা বিলিয়ন বিলিয়ন আয় করছে, অথচ সাধারণ একটি পেমেন্ট সময়মতো করতে পারছে না। এই দেরি যে অনেক মানুষকে ভোগাচ্ছে, তা পরিষ্কার।’
একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেক্সিকান সমর্থকও। তার দাবি, দুই মাসের বেশি সময় আগে বিক্রি করা টিকিট থেকে তার পাওনা আট হাজার পাউন্ডেরও বেশি। তিনি বলেন,
‘পুরো ব্যাপারটাই বিশৃঙ্খল মনে হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডের বিল মেটাতে আমাকে অন্য জায়গা থেকে টাকা ব্যবস্থা করতে হয়েছে।’
ফিফার অফিসিয়াল রিসেল মার্কেটপ্লেস চালু হয় গত ২ অক্টোবর। এখানে টিকিটধারীরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী দামে টিকিট বিক্রি করতে পারেন। তবে ফিফা প্রতিটি লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা- উভয়ের কাছ থেকেই ১৫ শতাংশ করে কমিশন কেটে নেয়।
গত ১১ ডিসেম্বর মূল টিকিট ব্যালট শুরু হওয়ার আগেই অনেক সমর্থক আগের ধাপে কেনা টিকিট বিক্রি করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে অসংখ্য টিকিট অননুমোদিত তৃতীয় পক্ষের ওয়েবসাইটেও বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে ফিফা বারবার সতর্ক করে বলছে, তাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্মই নিরাপদ এবং বৈধ পুনর্বিক্রয়ের নিশ্চয়তা দেয়।
টিকিটের উচ্চমূল্য নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই সম্প্রতি ফিফা ঘোষণা দিয়েছে, ১০৪টি ম্যাচের প্রতিটিতে সীমিত সংখ্যক ৬০ ডলারের ‘সাশ্রয়ী’ টিকিট চালু করা হবে।
এর আগে জানা গিয়েছিল, বিশ্বকাপ ফাইনালের সর্বোচ্চ টিকিটের দাম গড়িয়েছে ৬ হাজার ৬১৫ পাউন্ড পর্যন্ত- যা নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

