রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্কের ইতিহাসে এক নতুন ঘটনা ঘটল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলকে প্রকাশ্যে স্বাগত জানিয়েছে ক্রেমলিন বলেছে, এটি মূলত রাশিয়ার নিজস্ব ধারণার সাথে মিলে যায়।
রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সাংবাদিক পাভেল জারুবিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন,
‘আমরা যে সমন্বয়গুলো দেখছি, সেগুলো বহু দিক থেকেই আমাদের নিজের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।’
এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, স্নায়ুযুদ্ধের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি নথির প্রতি রাশিয়ার এই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এই প্রথম। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গিকে “নমনীয় বাস্তববাদ” হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এছাড়া ট্রাম্প স্বাক্ষরিত নতুন নিরাপত্তা নথিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও ১৯ শতকের “মনরো মতবাদ” পুনরুজ্জীবিত করা উচিত বলে যুক্তি দেয়া হয়েছে। ১৯ শতকে পশ্চিম গোলার্ধকে ওয়াশিংটনের প্রভাবক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
এই কৌশলপত্রে আরও বলা হয়, ইউরোপ বর্তমানে সভ্যতা বিলুপ্তির আশঙ্কার মুখে রয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানো যুক্তরাষ্ট্রের একটি মূল রাষ্ট্রীয় স্বার্থ এবং রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায় ওয়াশিংটন।
বিশ্ব রাজনীতির মৌলিক স্তরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার এমন প্রকাশ্য ঐকমত্য অত্যন্ত বিরল। যদিও অতীতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করেছে। যেমন- ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলো থেকে পারমাণবিক অস্ত্র রাশিয়ায় ফিরিয়ে আনা, কিংবা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নিরাপত্তা সহযোগিতায় একসঙ্গে কাজ করেছে দু’দেশ।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় মস্কো যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার পথে থাকা এক অবক্ষয়গ্রস্ত পুঁজিবাদী সাম্রাজ্য হিসেবে চিত্রিত করত, আর অন্যদিকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান ১৯৮৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ‘অশুভ সাম্রাজ্য’ ও ‘আধুনিক বিশ্বের অশুভের কেন্দ্র’ বলে আখ্যা দেন।
সোভিয়েত পতনের পর রাশিয়া পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে অংশীদারিত্বের আশা করলেও, ১৯৯৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের নিরাপত্তা নীতিতে ন্যাটোর সম্প্রসারণের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকেই দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। এই উত্তেজনা চূড়ান্ত রূপ নেয় ভ্লাদিমির পুতিন ১৯৯৯ সালের শেষ দিনে ক্রেমলিনের ক্ষমতায় আসার পর।
ট্রাম্পের নতুন কৌশলপত্রে ন্যাটোকে চিরায়তভাবে সম্প্রসারিত সামরিক জোট হিসেবে দেখার ধারণা বন্ধ করার অঙ্গীকারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘এই প্রতিশ্রুতি নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক।’
তবে একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘ডিপ স্টেট’, যা ট্রাম্পের ভাষায় এমন কৌশল যার মাধ্যমে কোনো দেশের ক্ষমতার স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চায়। এটি এমন এক নেটওয়ার্ক যা কোনো দেশের স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে দুর্বল করতে চায়। আর এতে ট্রাম্প নিজেও জড়িত। এই ‘ডিপ স্টেটই তার সংস্কারমূলক উদ্যোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।’
তবে, ট্রাম্পের সমালোচকদের মতে, ‘ডিপ স্টেট’ বলে আদৌ কিছু নেই এবং এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক কল্পনা, যার মাধ্যমে ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠরা নির্বাহী ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহারকে যুক্তিযুক্ত করার চেষ্টা করছেন।

