spot_img

ইসলামের দৃষ্টিতে অসচ্চরিত্রের কারণ ও প্রতিকার

অবশ্যই পরুন

ইবাদত-বন্দেগির মতো চারিত্রিক পরিশুদ্ধতা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। সচ্চরিত্রের মাধ্যমে বান্দা যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করে, তেমনি মন্দ স্বভাব ও চরিত্র বান্দার সঙ্গে আল্লাহর দূরত্ব সৃষ্টি করে। এজন্য আল্লাহ তাআলা চারিত্রিক পরিশুদ্ধিকে নববী মিশনের অংশ করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি সচ্চরিত্রকে পূর্ণতা দানের জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ২৭৩)

মন্দ চরিত্রের কুফল
মন্দ চরিত্র মানুষকে আল্লাহ ও তার সৃষ্টির কাছে ঘৃণার পাত্র বানায়। মন্দ স্বভাব ও চরিত্র মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে। ফলে পরকালেও তাদের পরিণতি হয় ভয়াবহ। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সর্বোত্তম তোমাদের মধ্যে সেই আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় এবং কিয়ামাত দিনও আমার খুবই কাছে থাকবে। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ঘৃণ্য সে ব্যক্তি কিয়ামাত দিনও আমার কাছ থেকে অনেক দূরে থাকবে। তারা হলো বাচাল, ধৃষ্ট-নির্লজ্জ এবং অহংকারে মত্ত ব্যক্তি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০১৮)

মন্দ চরিত্রের লক্ষণগুলো
কিছু আচরণের মাধ্যমে মানুষের মন্দ চরিত্র প্রকাশ পায়। নিম্নে তার কয়েকটি বর্ণনা করা হলো—
১. কঠোরতা : কোমলতা উত্তম চরিত্রের লক্ষণ এবং কঠোরতা মন্দ চরিত্রের নিদর্শন। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোমল চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমল-হূদয় হয়েছিলে। যদি তুমি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতে তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
২. রুক্ষ চেহারা : চেহারার রুক্ষতা মন্দ স্বভাবের একটি নিদর্শন। সর্বদা মুখ রুক্ষ ও মলিন করে রাখা উত্তম স্বভাবের পরিপন্থী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)
৩. অনিয়ন্ত্রিত রাগ : অনিয়ন্ত্রিত রাগ মন্দ স্বভাবের একটি বহিঃপ্রকাশ। মুমিন তার রাগ ও ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়, বরং সেই আসল বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১১৪)
৪. অহংকার : অহংকার মন্দ স্বভাবের একটি লক্ষণ। কোরআন ও হাদিসে অহংকারের কঠোর শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে।  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দাম্ভিক ব্যক্তিদেরকে কিয়ামতের দিন ক্ষুদ্র পিপড়ার মতো মানুষের রূপে সমবেত করা হবে। তাদেরকে চারদিক হতে অপমান ও লাঞ্ছনা ছেয়ে ফেলবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৯২)
৫. মন্দ ধারণা পোষণ : মানুষের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণা করাও মন্দ স্বভাবের একটি বহিঃপ্রকাশ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা বেশির ভাগ অনুমান থেকে দূরে থাকো। কেননা অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১২)
৬. নির্লজ্জতা : নির্লজ্জতা মানুষের মন্দ চরিত্রের প্রমাণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, পূর্ববর্তী নবীদের যে কথা মানুষ লাভ করেছে তা হলো, ‘যখন তোমার লজ্জা নেই তখন তুমি যা ইচ্ছা করতে পারে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪৮৪)

চরিত্র মন্দ হওয়ার কারণ
আল্লাহ মানুষকে উত্তম স্বভাব ও চরিত্র দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। অতঃপর নানাবিদ কারণে মানুষের স্বভাব-চরিত্র নষ্ট হয়। যার কয়েকটি হলো—
১. কুপ্রবৃত্তি : মানুষের ভেতর থাকা কুপ্রবৃত্তি ও মন্দ প্রবণতা মানুষের চরিত্র ধ্বংসের অন্যতম কারণ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘শপথ মানুষের এবং তাঁর, যিনি তাকে সুঠাম করেছেন। অতঃপর তাকে তার অসত্কর্ম ও তার সত্কর্মের জ্ঞান দান করেছেন।’ (সুরা শামস, আয়াত : ৭-৮)
২. মন্দ শিক্ষা ও প্রতিপালন : মন্দ শিক্ষা, দীক্ষা ও প্রতিপালন মানুষের চরিত্র নষ্টের কারণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের (সত্য দ্বিন ও উত্তম চরিত্রের) ওপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার মাতাপিতা তাকে ইহুদি বা খ্রিস্টান অথবা অগ্নি উপাসকে পরিণত করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩৮৫)
৩. অসত্ সঙ্গ : মন্দ পরিবেশ ও অসত্ সঙ্গের কারণে মানুষের স্বভাব-চরিত্র নষ্ট হয়। মহানবী (সা.) এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৮৩৩)
৪. প্রকাশ্য পাপাচার : প্রকাশ্য পাপাচার মানুষের ভেতর মন্দ স্বভাবের প্রবণতা তৈরি করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মন্দ কথার প্রচারণা আল্লাহ পছন্দ করেন না; তবে যার ওপর জুলুম করা হয়েছে সে ছাড়া। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৪৮)
৫. অজ্ঞতা : দ্বিনি শিক্ষা থাকার কারণে মানুষ মন্দ কাজে লিপ্ত হয়। যেমন আল্লাহ মানুষকে ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন এবং প্রবৃত্তিপূজারীদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। যেন মানুষ সত্পথের অনুসরণ করে। কিন্তু ধর্মীয় জ্ঞান না থাকলে আল্লাহর এই আহ্বান সম্পর্কে অবগত হওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করতে চান, আর যারা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরা ভীষণভাবে চথচ্যুত হও।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৭)

মন্দ চরিত্রের প্রতিকার
কিছু কাজ ও আমলের মাধ্যমে মানুষ মন্দ চরিত্র থেকে মুক্ত হতে পারে এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে পারে। যেমন—
১. পরিহারে সচেষ্ট হওয়া : মুমিন মন্দ চরিত্র পরিহার এবং সচ্চরিত্র অর্জনের চেষ্টা করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার পথে চেষ্টা করবে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)
২. তাকওয়া অবলম্বন করা : তাকওয়া বা আল্লাহভীতি মানুষকে মন্দ চরিত্র পরিহারে সাহায্য করে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা কোরো, আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা! তোমরা আমাকে ভয় কোরো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৭)
৩. উত্তম সঙ্গী বেছে নেওয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) সত্সঙ্গের কল্যাণকর দিক তুলে ধরে বলেন, ‘সত্ সঙ্গী ও অসত্ সঙ্গীর উদাহরণ মিসক বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের মতো। আতর বিক্রেতাদের থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসবে না। হয় তুমি আতর ক্রয় করবে, না হয় তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের হাপর হয় তোমার ঘর অথবা তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২১০১)
৪. তাওবা করা : অতীতের পাপ ও স্খলনের ব্যাপারে তাওবা করাও জরুরি। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তাওবা কোরো। তাহলে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হবে।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩১)
৫. অজ্ঞতা পরিহার : ইসলাম মানুষকে অজ্ঞতা পরিহার করতে বলেছে, এমনকি তাদেরকে অজ্ঞ মানুষ থেকেও দূরে থাকতে বলেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কোরো, সত্কাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলো।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৯৯)
৬. আল্লাহর কাছে দোয়া করা : মন্দ চরিত্র থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সত্পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তাদের সত্পথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং তাদেরকে মুত্তাকি হওয়ার শক্তি দান করেন।’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৭)

আল্লাহ সবাইকে দ্বিনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ সংবাদ

অক্ষয় খান্নাকে নিয়ে গুরুতর অভিযোগ করলেন প্রযোজক

বলিউডে নতুন করে বিতর্কের মুখে অক্ষয় খান্না। ‘ধুরন্ধর’ সিনেমায় রেহমান ডাকাত চরিত্রে প্রশংসিত অভিনয়ের পর হঠাৎ করেই অজয় দেবগনের...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ