আজ ১ ডিসেম্বর, বিশ্ব এইডস দিবস। প্রতি বছর এ দিনে বিশ্বজুড়ে এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, আক্রান্তদের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন জানানো এবং এই রোগে মৃত্যুবরণ করা মানুষদের স্মরণ করা হয়। দিবসটি মনে করিয়ে দেয়—এইচআইভি/এইডসের বিরুদ্ধে লড়াই এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য— ‘চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে, নতুনভাবে এইডস প্রতিরোধ গড়ে তোলা’। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, যুদ্ধ, জলবায়ুজনিত দুর্যোগ এবং স্বাস্থ্য খাতে অর্থ সংকট প্রতিরোধ প্রচেষ্টাকে ধীর করেছে। তবে একই সঙ্গে এই শ্লোগান সামনে এগিয়ে নতুন ও আধুনিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরির আশাও জাগায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, চিকিৎসা ও সচেতনতার অগ্রগতিতে বিশ্ব অনেক দূর এগোলেও সামনে এখনো বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ২০২৪ সালের শেষে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪ কোটি ৮ লাখ মানুষ এইচআইভি নিয়ে বেঁচে ছিলেন। একই বছরে নতুন সংক্রমণ হয়েছিল ১৩ লাখ এবং এইডস-সম্পর্কিত জটিলতায় মারা গেছেন প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। যদিও আগের দশকের তুলনায় এ সংখ্যা কম, তবুও এখনো ৯২ লাখ মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।
বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছেন শিশু, কিশোর-কিশোরী, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যই এখনো প্রতিরোধ ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।
২০২৫ সালে প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণা অবশ্য নতুন আশার দিক উন্মোচন করেছে। দীর্ঘমেয়াদি ইনজেকশনভিত্তিক অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ এখন আরও সহজলভ্য হচ্ছে, যা অনেকের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সহায়ক। পাশাপাশি নতুন গবেষণা মডেল ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীতে সংক্রমণের হার ও ধরণ আরও নির্ভুলভাবে ধরতে সাহায্য করছে—যা পরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সতর্কতা অনুযায়ী, চলমান অর্থসংকট ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ অগ্রগতিতে নতুন বাধা তৈরি করছে। এতে বৈশ্বিক লক্ষ্য—৯৫-৯৫-৯৫—এ পৌঁছানো আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
বিশ্ব এইডস দিবস ২০২৫ তাই বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এটি মনে করিয়ে দেয়—বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও বৈশ্বিক সচেতনতা আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নিলেও সমান স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না হলে এবং বৈষম্য দূর না হলে টেকসই সাফল্য সম্ভব নয়। এইডস প্রতিরোধ কেবল চিকিৎসার বিষয় নয়, এটি মানবাধিকার, ন্যায়, সমতা ও সম্মানের প্রশ্ন।
এই দিনে আমরা এইডসে মারা যাওয়া মানুষদের স্মরণ করি, এইচআইভি নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করি এবং প্রতিজ্ঞা করি—সমষ্টিগত প্রচেষ্টায় একদিন এইডসমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব।

