মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১৪টি এখন আরাকান আর্মির (এএ) নিয়ন্ত্রণে। সামরিক জান্তা শুধু সিত্তে, কিয়াকফিউ ও মানাউং টাউনশিপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে। তবে এবার কিয়াকফিউতেও বড় ধরনের হামলার মুখে পড়েছে জান্তা বাহিনী। শনিবারের এ হামলায় অন্তত ৩০ সেনা নিহত হয়েছে। স্থানীয় সামরিক সূত্র এই খবর দিয়েছে বলে মায়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনী থাইন চাউং টাং ঘাঁটি দখল করার পর ওই এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয়। এখানে চীনের বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প রয়েছে। এএ–এর ঘনিষ্ঠ এক সূত্র ইরাবতীকে এ কথা জানায়, আরকান আর্মি আগে থেকেই মিনপিন গ্রামটির চারপাশে মাইন পেতে সেখানে থেকে সরে যায়।
তবে সেনাসদস্যরা নিরাপদ ভেবে ওই এলাকায় প্রবেশ করে, ঠিক তখনই এএ তাদের ওপর গুলি চালায়। তিনি বলেন, ‘তারা ভেবেছিল এলাকা পরিষ্কার, কিন্তু আমরা জোর আঘাত হেনেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সেনারা মনে করেছিল গ্রাম ফাঁকা, তাই তারা আরাম করে ভেতরে ঢোকে এবং এমনকি দলবেঁধে ছবি তুলছিল। সেই সময়ই এএ ভারী ও হালকা অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়।
গ্রামটি থাইং চাউং তাউং ঘাঁটি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে কিয়াকফিউ-রাম্রি সড়কে অবস্থিত। গত ১০ নভেম্বর শাসকগোষ্ঠী গ্রামটি পুনরুদ্ধার করেছিল। সেখানে একটি রাডার স্টেশন রয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, টাউনশিপের এলসওয়েরের কাছে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। সাম্প্রতি শাসকগোষ্ঠী তার দানিয়াওয়াদি নৌ ঘাঁটি, ৩২ নম্বর পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং স্থানীয় ব্যাটালিয়নগুলোকে ব্যাপকভাবে শক্তিশালী করেছে। এই বছরের শুরুতে আরকান আর্মিকে প্রতিহত করার জন্য ফ্রন্টলাইন ফাঁড়ি সম্প্রসারণ করেছে এবং নতুনভাবে আক্রমণ শুরু করেছে।
স্থানীয় সাহায্য কর্মীদের মতে, সংঘর্ষের ফলে বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে বহু মানুষ। কিউকফিউজুড়ে অভ্যন্তরীণ শরণার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেছেন, ‘বিমান হামলা অবিরাম চলছে এবং নৌবাহিনী প্রায় প্রতিদিনই গুলি চালাচ্ছে। বাস্তুচ্যুত পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে। এখন সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন হলো খাদ্য।’
৩২ নম্বর পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং পাওয়ারচায়না গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ও উপকূলীয় গ্যাস টার্মিনালের কাছাকাছি উপকূলীয় গ্রামগুলো এখনও আরকান আর্মির দখলে রয়েছে। এগুলো কিয়াকফিউ শহরের জান্তা ব্যাটালিয়ন থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, শাসকগোষ্ঠী এই মাসে প্রায় এক হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। এই শহরটিতে তিনটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন, একটি পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং তিনটি নৌ ঘাঁটি রয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চীন এখানে শাসনব্যবস্থার জন্য ড্রোন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করেছে। কিন্তু ইরাবতী স্বাধীনভাবে এই প্রতিবেদনগুলো যাচাই করতে পারেনি। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, জান্তা বাহিনী কিয়াকফিউ এলাকায় গ্রামগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে এবং পণ্য ও ওষুধ পরিবহন বন্ধ করে রেখেছে। এতে করে শহর ও গ্রাম, দুই জায়গাতেই খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি আলো বেড়ে যাচ্ছে এবং সংঘাত দ্রুত বাড়ছে।
সূত্র : ইরাবতী

