spot_img

নয়াদিল্লিতে বিস্ফোরণের দায় পাকিস্তানের কাঁধে কেন চাপাচ্ছে না ভারত?

অবশ্যই পরুন

চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনের যুদ্ধ শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, ভবিষ্যতে যেকোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে গণ্য করবে তাঁর সরকার। তার আগে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এপ্রিলে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৫ জন নিহত হওয়ার পর ভারত দোষ চাপিয়েছিল পাকিস্তানের ওপর।

ইসলামাবাদ সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও মে মাসের গোড়ার দিকে ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়। এতে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে এক সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র আকাশযুদ্ধ শুরু হয়। সে সময় দুই দেশই একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ করে।

চার দিন পর দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য তখন নয়া এক ‘রেড লাইন বা চূড়ান্ত সীমারেখা’ টেনে দেয়। তাঁর বক্তব্য ভবিষ্যতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে একেবারে ন্যূনতম সীমা নির্ধারণ করে দেয়।

এরপর গত সোমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি কেঁপে ওঠে এক বড় বিস্ফোরণে। ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছেই ওই বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন নিহত ও দুই ডজনের মতো আহত হয়। ভারত সরকার এই ‘সন্ত্রাসী হামলার’ তদন্ত করছে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। যাদের দায়িত্বই হলো সন্ত্রাসবিরোধী মামলার অনুসন্ধান করা। হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে।

হামলার পরদিন মঙ্গলবার মোদি ভুটানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই হামলায় জড়িতরা কেউই রেহাই পাবে না। সব অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ তবে বিস্ফোরণের দুই দিন পরও ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেননি। এর মধ্যেই আবার গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক প্রাণঘাতী বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তান ভারতকে দায়ী করেছে। কিন্তু ভারত এখন পর্যন্ত নিজেদের রাজধানীতে আগের দিন ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করা থেকে বিরত রয়েছে।

এমন প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক। কারণ, অতীতে ভারতের তদন্ত সংস্থাগুলো হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে। কিন্তু এবার বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির সাবধানী নীরবতা অনেকের নজর কেড়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তদন্তকারীরা হামলাকারীদের সূত্র খুঁজে পেয়েছেন কাশ্মীরের দিক থেকে, আর সেখানে পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও মিলেছে।

হিন্দুকুশ থেকে রংপুর: পানি নিয়ে যুদ্ধের মুখোমুখি দক্ষিণ এশিয়াহিন্দুকুশ থেকে রংপুর: পানি নিয়ে যুদ্ধের মুখোমুখি দক্ষিণ এশিয়া
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মে মাসের বিমানযুদ্ধের পর ভারত যেভাবে উচ্চকণ্ঠে যুদ্ধংদেহী অবস্থান নিয়েছিল, এখন সেই অবস্থানই ভারতের নিজস্ব কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি করেছে। মোদি যেভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে ভবিষ্যতে যেকোনো ‘সন্ত্রাসী হামলাকে’ সরাসরি যুদ্ধ হিসেবে দেখা হবে—সেই ‘চূড়ান্ত সীমা’ এখন সরকারের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। কারণ, যদি তারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে নয়াদিল্লির বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করে, তাহলে জনগণের মধ্যে সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানে সামরিক পাল্টা আঘাতের দাবি উঠবে।

সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের নির্বাহী পরিচালক অজয় সাহনি বলেন, ‘ভারত সরকার নিজেই নিজের জন্য ফাঁদ তৈরি করেছে—নিজের বানানো ফাঁদে নিজেই আটকা পড়েছে। তারা বলেছে, সন্ত্রাস মানেই যুদ্ধ, কিন্তু এর কোনো স্পষ্ট নীতি তৈরি করেনি। এখন সেই কথারই ফল ভুগছে তারা। এটা কোনো নীতি নয়, বরং স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক লাভের জন্য নেওয়া একেবারে বোকামিতে পূর্ণ অবস্থান।’

লালকেল্লার জনাকীর্ণ বাজারে বিস্ফোরণ ঘটার কয়েক ঘণ্টা আগে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলিশ নয়াদিল্লি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অভিযান চালায়। তাদের দাবি, একটি ‘আন্তরাজ্য ও আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক’ ধ্বংস করেছে। পুলিশের ভাষ্য, ওই নেটওয়ার্ক নিষিদ্ধ সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম) ও আনসার গাজওয়াতুল-হিন্দের (এজিইউএইচ) সঙ্গে যুক্ত। জেইএম পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। মে মাসে পাকিস্তানে ভারতীয় বাহিনীর বিমান হামলায় এই গোষ্ঠীর কয়েকটি ঘাঁটিও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।

ভোটে জিততে বিজেপির ‘নথি যাচাই’ কৌশল, ৯ কোটি ভারতীয়র ভোটাধিকার হারানোর শঙ্কাভোটে জিততে বিজেপির ‘নথি যাচাই’ কৌশল, ৯ কোটি ভারতীয়র ভোটাধিকার হারানোর শঙ্কা

অন্যদিকে এজিইউএইচ হলো আল-কায়েদা ঘনিষ্ঠ কাশ্মীরি সংগঠন, যা হিজবুল মুজাহিদীন থেকে আলাদা হয়ে গঠিত হয়েছে। একসময় কাশ্মীরি বিদ্রোহী নেতা জাকির মুসার নেতৃত্বে সংগঠনটি সক্রিয় ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের মে মাসে মুসা নিহত হওয়ার পর থেকে গোষ্ঠীটি তুলনামূলকভাবে নিস্তেজ হয়ে গেছে।

উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অভিযানের পর কাশ্মীর পুলিশ জানায়, তারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক সামগ্রী উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কেজি আইইডি বা তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি বিস্ফোরক যন্ত্র তৈরির উপকরণ যেমন, রাসায়নিক পদার্থ, ইলেকট্রনিক সার্কিট এবং রিমোট কন্ট্রোল ইত্যাদি।

পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে, যার মধ্যে দুই কাশ্মীরি চিকিৎসক রয়েছেন। অপর চিকিৎসক দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার উমর নবী—প্রথম দফায় গ্রেপ্তারের পর পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা এখন ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে লালকেল্লার বাইরে বিস্ফোরিত গাড়িটি উমর নবী চালাচ্ছিলেন কি না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা পাওয়া গেছে যে দিল্লি বিস্ফোরণের পেছনে পাকিস্তানভিত্তিক কিছু গোষ্ঠীর লজিস্টিক সহায়তা ছিল। তবে যাঁরা বাস্তবে হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছেন তাঁরা স্থানীয় এবং নিজেরাই চরমপন্থায় জড়িয়েছিলেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখনো খতিয়ে দেখছি তারা কীভাবে এর জন্য অর্থ জোগাড় করেছিল।’

বিশ্লেষকদের মতে, তদন্তে যা-ই বেরিয়ে আসুক না কেন, এপ্রিলের হামলার পর ভারত যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলে সেটাই এবার কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতিতে নয়াদিল্লিকে জটিল অবস্থায় ফেলবে। ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, নয়াদিল্লি এখন নিজস্ব নতুন নীতিগত মতাদর্শের ফাঁদে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি সরকার প্রকাশ্যে এটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে ঘোষণা করে, তাহলে কৌশলগত ও রাজনৈতিকভাবে সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতো বড় কিছু করে দেখানোর চাপ পড়বে।’

বিশ্লেষক অজয় সাহনি বলেন, মোদির সরকার এখনো স্পষ্টভাবে বলেনি তাদের ধারণায় কোন ধরনের হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ধরা হবে, বিশেষ করে পেহেলগাম-পরবর্তী নীতির প্রেক্ষাপটে। সাহনির প্রশ্ন, ‘যদি কোনো সন্ত্রাসী মাত্র একজন সাধারণ মানুষকেও গুলি করে হত্যা করে, সেটিও কি সন্ত্রাস নয়?’ তিনি আরও বলেন, ‘এসব কেবল রাজনৈতিক বক্তব্য, দেশের ভেতরের নির্দিষ্ট শ্রোতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য।’ সাহনি বলেন, এখন দিল্লির বিস্ফোরণের পর সরকারকে এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কিপ্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি
কুগেলম্যান জানান, পেহেলগাম হামলার পর মে মাসে পাকিস্তানে বিমান হামলা করায় ভারতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘ব্যাপক সমালোচনার মুখে’ পড়তে হয়। কারণ, ভারত ইসলামাবাদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘এর ফলে সংঘাত চালকালীন পুরো সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ধরে রাখা ভারতের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।’

তিনি বলেন, পেহেলগামের ঘটনায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ উপস্থাপন করতে ভারতের অস্বীকৃতি বা ব্যর্থতা ইসলামাবাদের অবস্থানকেই শক্তিশালী করেছে। কারণ, পাকিস্তান নিজেকে আক্রমণের শিকার হিসেবে উপস্থাপন করেছে।

যা হোক, লালকেল্লা বিস্ফোরণের পর এখন পর্যন্ত তদন্ত ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ঘিরেই চলছে। সোমবারের বিস্ফোরণের পর থেকে কাশ্মীরে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে সন্দেহভাজনদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।

কাশ্মীরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ শওকত বলেন, অঞ্চলটিতে কঠোর অভিযান চললেও ভারত পেহেলগাম হামলার পর নিজেদের প্রতিক্রিয়া থেকে কিছুটা শিক্ষা নিয়েছে বলেই মনে হয়। তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোতে এখন এক ধরনের পরিণত উপলব্ধি তৈরি হয়েছে যে, যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সবার জন্য ক্ষতির কারণ হয়।’

গত মে মাসের যুদ্ধ ভারতের ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী লাখ লাখ কাশ্মীরির জীবন ধ্বংস করে দেয়। সীমান্তবর্তী বহু গ্রাম খালি করতে হয়, দুই পক্ষেই সাধারণ নাগরিক নিহত হয়। শওকত বলেন, পাকিস্তানকে তাৎক্ষণিকভাবে দোষারোপ না করে অপেক্ষা করা ভারতীয় সংস্থাগুলোকে নিজেদের পরিস্থিতি ও প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করার সুযোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্যথায়, পাকিস্তানকে দোষারোপ করা মানে নিজের দায় এড়ানোর একটা পুরোনো কৌশল।’

ভারতের এই দায় না চাপানোর বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। তিনি বারবার দাবি করেছেন যে তিনিই মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করিয়ে দিয়েছেন। আর ভারত বারবার এটি অস্বীকার করেছে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দুই দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার হুমকি ব্যবহার করেছিলেন। আর তাতেই ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ থামাতে বাধ্য হয়।

বর্তমানে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। দীর্ঘ আলোচনার পর দুই দেশ এখন একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের কাছাকাছি বলে জানা গেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের একাধিক পর্যায়ে একাধিকবার হোয়াইট হাউসে আতিথেয়তা দিয়েছে।

কুগেলম্যান বলেন, ট্রাম্প এই সমীকরণে উভয় দেশের জন্যই একটি জটিল উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, কোনো দেশই তাঁকে বিরক্ত করতে চায় না। কারণ, এতে তিনি যে যুদ্ধবিরতিকে নিজের বড় কূটনৈতিক সাফল্য বলে দাবি করেছেন, তা ভঙ্গ হয়েছে বলে মনে হতে পারে।

ভারতে মুসলিম ঘৃণা যেভাবে নিত্যদিনের বিনোদন হয়ে উঠেছেভারতে মুসলিম ঘৃণা যেভাবে নিত্যদিনের বিনোদন হয়ে উঠেছে
তবে বিষয়টা শুধু ট্রাম্পকে ঘিরে নয়। নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংকট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) ভূরাজনীতি বিশ্লেষক হর্ষ পন্ত বলেছেন, ভারতের কৌশল সব সময় ‘সংঘাত এড়িয়ে চলা।’ তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হিসেবে ভারত এখন নিজের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে চায়।’

হর্ষ পন্তর ভাষায়, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতে জড়িয়ে থাকা ভারতের পক্ষে কোনোভাবেই সুবিধাজনক নয়। যুদ্ধাবস্থার মতো অবস্থানে থাকতে হলে অর্থনৈতিকভাবে এবং কৌশলগতভাবেও ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ, যেসব সম্পদ উন্নয়নে ব্যবহার করা যেত, সেগুলো তখন পাকিস্তানকে কেন্দ্র করেই ব্যয় করতে হয়।’

তবে মে মাসের সংঘাতের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষিত নতুন সীমারেখাগুলো দিল্লি বিস্ফোরণের পেছনে দায়ীদের নাম প্রকাশে ভারতের সতর্কতার মূল কারণ—এই মতের সঙ্গে একমত নন পন্ত। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের আগেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশ কিছু মানুষকে আটক করেছিল, যাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছিল। ফলে তারা বলতে পারে যে একটি বড় ষড়যন্ত্র উন্মোচন এবং ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা পেহেলগামের ঘটনার মতো ছিল না।’

পন্ত আরও বলেন, ‘এই বিস্ফোরণ সম্ভবত পরিকল্পিত ছিল না। এটি একধরনের দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে।’ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি ইঙ্গিত করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন পালানোর চেষ্টা করার সময় গাড়িটি বিস্ফোরিত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘তাই আমি মনে করি, দিল্লি সরকার এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাইবে না।’

এই মনোভাব ভারতের অতীতের বিভিন্ন প্রাণঘাতী শহুরে হামলার প্রতিক্রিয়ার তুলনায় অনেকটা ভিন্ন এবং একই ধরনের ঘটনার পর পাকিস্তানের আচরণের সঙ্গেও এর তীব্র পার্থক্য রয়েছে। ভারত সরকার যখন জানায় যে, দিল্লি বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে, তার কয়েক ঘণ্টা পরই পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়।

ইসলামাবাদের আদালত কমপ্লেক্সের বাইরে এই বিস্ফোরণটি ঘটে এমন সময়ে, যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ওয়ানায় একটি ক্যাডেট কলেজে জঙ্গিদের হাতে আটক শতাধিক শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে ব্যস্ত। ওয়ানা শহরটি আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে অবস্থিত।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কোনো প্রমাণ না দিয়েই ইসলামাবাদ ও ওয়ানার উভয় ঘটনার জন্য ভারতকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘উভয় হামলাই অঞ্চলে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ। এখনই বিশ্বের উচিত ভারতের এমন নোংরা ষড়যন্ত্রের নিন্দা জানানো।’ ভারত এসব অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।

এই হামলাগুলো এমন সময় ঘটছে, যখন পাকিস্তান ও তালেবানশাসিত আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। গত মাসে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্তে একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। সেই সংঘর্ষের সময়ই আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমবারের মতো ভারত সফরে ছিলেন, যা নয়াদিল্লি ও কাবুলের মধ্যে এক নতুন জোট গঠনের ইঙ্গিত দেয়।

কাবুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় দিল্লির কী লাভ, ইসলামাবাদ কেন ক্ষুব্ধকাবুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় দিল্লির কী লাভ, ইসলামাবাদ কেন ক্ষুব্ধ
দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তান ছিল তালেবানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, আর ভারত সেই গোষ্ঠীকে ইসলামাবাদের প্রভাবাধীন একটি প্রক্সি হিসেবে দেখত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি উল্টে গেছে। পাকিস্তান এখন অভিযোগ করছে, তালেবান ভারতের স্বার্থে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে।

পাকিস্তানের অভিযোগ, তালেবান পাকিস্তানবিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) আশ্রয় দিচ্ছে। যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের ভেতরে ঘটে যাওয়া বেশির ভাগ বড় হামলার দায় স্বীকার করেছে, যদিও মঙ্গলবারের আত্মঘাতী হামলার দায় এখনো তারা নেয়নি।

ভারতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থনের অভিযোগ তুললেও, ইসলামাবাদ এখনো স্পষ্ট করে জানায়নি, তারা কীভাবে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে। বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই অনিশ্চয়তাই পাকিস্তানকে তার কাঙ্ক্ষিত কৌশলগত নমনীয়তা দিয়েছে।’

সর্বশেষ সংবাদ

আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারার সংস্কৃতি আওয়ামী লীগের: রিজভী

পরিবহন ও বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেওয়া এবং আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারার সংস্কৃতি আওয়ামী লীগের বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ