‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকডস’ বইতে নাম আছে কয়েক হাজার। বিশ্বের নানা বিষয়ে সর্বোচ্চ অর্জন কিংবা বিসর্জনের জন্যও এই বইতে নাম লেখানো যায়। তবে মানবতার জন্য নাম লেখানো বোধহয় খুব বেশি নেই। কারণ যারা মানবতার সবায় ব্রতী হোন তারা প্রচারের জন্য এমন মহৎ কাজে মনোনিবেশ করেন না।
এই যেমন ভারতের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী পলক মুচ্ছলের কথা সবাই জানে। শৈশব থেকেই মানবসেবায় নিয়োজিত তিনি। সুরের মুর্ছনায় যেমন আসুদ্রহিমাচল মাতিয়ে রাখেন, তেমনই হাজারো শিশুর জীবনে আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নতুন জীবন দেয়ার চেষ্টা করছেন বিপন্ন শিশুদের।
বলিউডের জনপ্রিয় প্লেব্যাক গায়িকা হওয়ার পাশাপাশি কনসার্ট করেন শুধুমাত্র দুস্থদের পাশে থাকার জন্য। তার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে নয় নয় করে প্রায় চার হাজার শিশুর হার্ট সার্জারি হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই এবার গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এবং লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে নাম তুললেন পলক মুচ্ছল।
কণ্ঠশিল্পীদের নাম গিনেস বুকে ওঠার গল্প নতুন না। এবার সে তালিকায় বলিউডের জনপ্রিয় গায়িকা পলক মুচ্ছল। তবে সুর দিয়ে অন্ধকার হৃদয়ে আলো জ্বালানোর কারণে না। ৩,৮০০ দুস্থ শিশুর হার্ট সার্জারির খরচ বহন করে অন্ধকারাচ্ছান্ন জীবনে আলোর দিশা দেখানোয় পলকের নাম উঠেছে গিনেসে।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, ছোট্টবেলা থেকেই নিজেকে মানবসেবায় নিয়োজিত রেখেছেন পলক। রয়েছে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এতগুলো শিশুর হৃদয়ের চিকিৎসা করিয়েছেন গায়িকা। যা তাকে এনে দিয়েছে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এবং লিমকা বুক অফ রেকর্ডস-এ নাম।
‘পলক পলাশ চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন’ নামের এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যাত্রা শুরু ২০১১ সালে। কিছুদিন আগে এ নিয়ে বলেছিলেন, খুব ছোট করে উদ্যোগটা শুরু করেছিলাম। যা সাত বছরের এক শিশুর জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছিল। তবে বর্তমানে এটাই আমার জীবনের সব থেকে বড় মিশন হয়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, আমার প্রত্যেকটা কনসার্ট শিশুদের হার্ট সার্জারির জন্যেই আয়োজিত হয়। যাদের মা-বাবা এই বিপুল খরচ বহন করতে অক্ষম, সেসব শিশুদের কথা মাথায় রেখেই ‘পলক পলাশ চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন’ খোলা। বয়স যখন ৭-৮ তখন থেকেই দুস্থ শিশুদের কষ্ট পলককে কষ্ট দিতো।
তখন থেকেই নিজের শ্রম ও সময় খরচ করতে থাকেন এই কাজে। ওই সময় কার্গিল যুদ্ধে আহত জওয়ানদের চিকিৎসার জন্য রাস্তায় গান গেয়ে ২৫ হাজার টাকা উপার্জন করেছিলেন। সেই থেকে শুরু। সে বছরই ঘুর্ণীঝড়ে বিধ্বস্ত ওড়িশায় নিজস্ব খরচে ত্রাণ পাঠান।
পরবর্তীতে এক স্কুল পড়ুয়ার হার্ট সার্জারির জন্য ৫১ হাজার টাকা তুলেছিলেন। পলক মুচ্ছলের এহেন উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে খ্যাতনামা হৃরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি বিনামূল্যে ওই শিশুর অস্ত্রোপচার করেন। সেখান থেকেই পলক মুচ্ছলের হার্ট ফাউন্ডেশনের শুরু। এরপর একে একে বহু শিশুর হার্টে সফল অস্ত্রোপচার।
এমন মানবিক উদ্যোগের জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেলেন বলিউড গায়িকা। মানবসেবার জন্য প্রথম কোনও বলিউড গায়িকার নাম উঠল গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। পলকের মুকুটে ‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’-এর খেতাব জুড়তেই উচ্ছ্বসিত গায়িকার ঘনিষ্ঠমহল। শুভেচ্ছার জোয়ারে ভাসছেন পলক মুচ্ছল।

