spot_img

মুমিনের ঘর-বাড়ির পরিবেশ : নির্দেশনা ও উপদেশ

অবশ্যই পরুন

ঘরে আল্লাহর জিকির ও ইবাদতের পরিবেশ
হাদিসের বাণী: ‘যে ঘরে আল্লাহর জিকির হয় এবং যে ঘরে আল্লাহর জিকির হয় না; তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃতের মতো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪০৭)
উপদেশ: ঘরে আল্লাহর স্মরণ থাকলে অন্তর জীবিত থাকে, পরিবারে মানসিক শান্তি বজায় থাকে।
করণীয়:

  • প্রতিদিন জিকির ও তেলাওয়াত করা।
  • শিশুদের জিকির শেখানো।
  • নিজেরা নিয়মিত জিকির করা।
  • আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিলকারী বস্তু ও শব্দ থেকে ঘরকে পবিত্র রাখা।

নামাজ আদায় করা
কোরআনের বাণী: ‘…আমার (আল্লাহর) স্মরণে সালাত কায়েম করো।’ (সুরা ত্বা-হা, আয়াত : ১৪)
উপদেশ: কিছু সালাত ঘরে সালাত আদায় করা মুমিনের দায়িত্ব।
করণীয়:

  • ঘরে নামাজের আলাদা স্থান তৈরি করা।
  • শিশুদের ছোট বয়স থেকে নামাজে অভ্যস্ত করা।
  • সুন্নত ও নফল ঘরে আদায় করা।
  • মাঝে মাঝে পরিবারের সঙ্গে জামাতে নামাজ পড়া।

পর্দা ও লজ্জাশীলতার পরিবেশ
কোরআনের বাণী: ‘হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ (চাদরের কিছু অংশ) নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৯)
উপদেশ: নারীর নিরাপত্তার জন্য পর্দা আবশ্যক।
করণীয়:

  • নারী ও শিশুদের শালীন ও ইসলামী পোশাকে অভ্যস্ত করা।
  • ঘরে লজ্জাশীলতার পরিবেশ তৈরি করা।
  • পর্দার গুরুত্ব বিষয়ে তাদের অবহিত করা।
  • পর্দাহীনতার কুফল নারীদের সামনে তুলে ধরা।

ঘরে কোরআনচর্চা
কোরআনের বাণী: ‘তোমার প্রতি যে কিতাব ওহি করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত করো এবং সালাত কায়েম করো। নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা করো।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)
উপদেশ: কোরআন শিক্ষার উপযুক্ত স্থান ঘর। কোরআনময় ঘর বরকতময় হয়।
করণীয়:

  • প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াতের জন্য সময় বের করা।
  • শিশুদের কোরআনের কাহিনি ও ইতিহাস শেখানো।
  • নবী ও নবীপরিবারের চরিত্রে অনুপ্রাণিত করা।
  • ঘরকে কোরআন তেলাওয়াতে মুখরিত রাখা।

মেহমানদারি ও প্রতিবেশীর প্রতি সম্মান
হাদিসের বাণী: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানের সম্মান করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)
উপদেশ: মুমিনের ঘরে অতিথি ও প্রতিবেশীর প্রতি সম্মান ও সেবা থাকলে পরিবারে নৈতিকতা ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়।
করণীয়:

  • প্রতিবেশীর সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা।
  • প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ না করা।
  • ঘরে মেহমান এলে মন খারাপ না করা।
  • মেহমানকে যথাসাধ্য সম্মান করা।
  • মেহমানের জন্য যথাসাধ্য মেহমানদারি করা।

ঘরে প্রবেশের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা
হাদিসের বাণী: ‘কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ ও খাদ্য গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম নিলে শয়তান (তার সঙ্গীদের) বলে, রাতে এখানে তোমাদের থাকা-খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যখন কোনো ব্যক্তি ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর নাম নেয় না, তখন শয়তান বলে, তোমরা রাতে থাকার স্থান পেলে। সে যখন খাবার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে না তখন শয়তান বলে, তোমরা রাতে থাকার জায়গা ও খাওয়ার দুটোরই সুযোগ পেলে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭৬৫)
উপদেশ: ঘরে প্রবেশকালে ও খাবার গ্রহণের সময় অবশ্যই আল্লাহর নাম স্মরণ করবে—‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করবে।
করণীয়:

  • ঘরে প্রবেশের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা।
  • শিশুকে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে অভ্যস্ত করা।
  • খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করা।

ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ’ বলা
হাদিসের বাণী: ‘ঘর থেকে কেউ বাইরে রওয়ানা হওয়াকালে যদি বলে—“আল্লাহ তাআলার নামে, আল্লাহ তাআলার ওপরই আমি নির্ভর করলাম, আল্লাহ তাআলার সাহায্য ছাড়া (পাপ থেকে) বিরত থাকা ও মঙ্গল লাভ করার শক্তি কারো নেই”, তাহলে তাকে বলা হয় (আল্লাহ তাআলাই) তোমার জন্য যথেষ্ট, (অনিষ্টি হতে) তুমি নিরাপত্তা লাভ করেছ। আর তার থেকে শয়তান দূরে সরে যায়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪২৬)
উপদেশ: ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আল্লাহর নাম নিলে অতর্কিত বিপদ থেকে রক্ষা মেলে।
করণীয়:

  • ঘর থেকে বের হলে আল্লাহর নাম স্মরণ করা।
  • বিভিন্ন সময়ে পঠিতব্য হাদিসের দোয়াগুলো মুখস্থ করা।
  • সব কাজের আগে আল্লাহর ওপর ভরসা করা।

ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দেওয়া
কোরআনের বাণী: ‘হে মুমিনরা, তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদের সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা নূর, আয়াত : ২৭)
উপদেশ: সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করা ঘরে প্রশান্তির বার্তা দেয়।
করণীয়:

  • ঘরে প্রবেশের সময় নিয়মিত সালাম দেওয়া।
  • শিশুদের সালাম দিতে অভ্যস্ত করা।
  • সালাম দিয়ে ঘরে কল্যাণের দরজা খোলা।

ঘরে শয্যা গ্রহণের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা
হাদিসের বাণী: ‘যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের সন্তানদের ঘরে আটকে রাখো। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করলে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পার। আর ঘরের দরজা বন্ধ করবে। কেননা, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের মশকের মুখ বন্ধ করবে এবং আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের পাত্রগুলো ঢেকে রাখবে, কমপক্ষে পাত্রগুলোর ওপর কোনো বস্তু আড়াআড়ি করে রেখে। আর (শয্যা গ্রহণের সময়) তোমরা তোমাদের প্রদীপগুলো নিভিয়ে দেবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬২৩)
উপদেশ: সন্ধ্যা নেমে আসার আগে ঘরের দরজা বন্ধ করা, রাতে প্রদীপ নিভিয়ে দেওয়া এবং খাবার ঢেকে রাখা ঘরের বিশেষ নিরাপত্তার জন্য জরুরি।
করণীয়:

  • সন্ধ্যায় শিশুদের বাইরে রাখা যাবে না।
  • সন্ধ্যায় দরজা ও জানালা ‘বিসমিল্লাহ’ বলে বন্ধ রাখবে।
  • রাতে ঘুমানোর সময় প্রদীপ বা আগুন নিভিয়ে রাখবে।
  • খাবার ঢেকে রাখবে।
  • রাতে বেশি বেশি আল্লাহর নাম স্মরণ করবে।

ঘরে ছবি বা মূর্তি রাখবে না
হাদিসের বাণী: ‘যে ঘরে কুকুর আর প্রাণীর ছবি থাকে, সে ঘরে (রহমত ও বরকতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৩২২৫)
উপদেশ: মুমিনের ঘরে ছবি ও মূর্তি রাখা ঘরকে রহমত ও বরকতহীন করে।
করণীয়:

  • ঘরকে বরকতময় রাখার জন্য ছবি ও মূর্তি না রাখা।
  • ঘরের সাজসজ্জায় ইসলামী ভাবধারা বজায় রাখা।
  • নিছক শখের বশে কুকুর না পোষা। তবে নিরাপত্তার জন্য কুকুর পালতে অসুবিধা নেই।

সর্বশেষ সংবাদ

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহত ৫, পশ্চিমতীরে ১

যুদ্ধবিরতি চুক্তি উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। উপত্যকাটিতে দখলদার বাহিনীর সবশেষ হামলায় আরও ৫ ফিলিস্তিনি...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ