ইরানের সংসদের স্পিকার গালিবাফ বলেছেন, ইসরায়েলি শাসন তার লক্ষ্যবস্তু দেশগুলোকে হয় আরোপিত যুদ্ধের মাধ্যমে, নয়তো প্রতারণামূলক শান্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কখনো আত্মসমর্পণ করবে না। বুধবার (৩০ অক্টোবর) উত্তর খোরাসান প্রদেশে ইরানি শহীদদের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্পিকার বলেন, ইসরায়েলি শাসনের কয়েক দশকের ইতিহাসে দেখা গেছে, তারা হয় প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর অযৌক্তিক আগ্রাসন চালিয়েছে, নয়তো তথাকথিত “শান্তি চুক্তি” করেছে—যা আসলে যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জনে ব্যর্থ হওয়া লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের উপায় মাত্র।
গালিবাফ “বিস্তারবাদী ও শিশু হত্যাকারী এই শাসনের” নিত্যনতুন ভূখণ্ড দখলের ঘটনাগুলোরও নিন্দা জানান।
তিনি বলেন, “আমরা না আত্মসমর্পণ করব, না দাসত্ব মেনে নেবো।”
ইরানের দৃঢ়তার উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, গত জুন মাসে ইসরায়েলি শাসন ও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিরোধ এবং তার জবাবে দেওয়া পাল্টা প্রতিক্রিয়া, যা এক ঐতিহাসিক রেকর্ড স্থাপন করেছে।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনী সে সময় পরিকল্পিত প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে আগ্রাসীদের অনুপ্রবেশ ও বিভাজনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় এবং ধারাবাহিক বিমান হামলার মুখেও সফলভাবে পাল্টা জবাব দেয়।
গালিবাফ বলেন, পশ্চিম এশিয়ায় ওই শাসনব্যবস্থা টিকে থাকার প্রায় ৮০ বছরে “কোনও দেশ কখনও তাদের এমনভাবে মোকাবিলা করেনি।”
তিনি যোগ করেন, পাল্টা জবাব শুরুর মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যেই “সবাই আমাদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার চেষ্টা করছিল।”
গালিবাফ যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকেও সমালোচনা করেন, যা সেই সময় তেহরানের সঙ্গে চলমান পরোক্ষ আলোচনার পরও আগ্রাসনে অংশ নেয়।
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র শান্তি ও সংলাপের কথা বলছিল, (সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড) ট্রাম্পও শান্তির আহ্বান জানাচ্ছিলেন। অথচ একই সময়ে মার্কিন যুদ্ধবিমান আমাদের পারমাণবিক স্থাপনা বোমা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।”
বিদেশি আগ্রাসনের মুখে ইরানের স্থিতিশীলতার আরেকটি উদাহরণ হিসেবে গালিবাফ উল্লেখ করেন ১৯৮০-এর দশকে ইরাকের চাপিয়ে দেওয়া পশ্চিমা-সমর্থিত যুদ্ধের সময় ইরানের প্রতিরোধের ইতিহাস।
তিনি বলেন, “যুদ্ধ চলাকালে আমাদের যোদ্ধারা কখনও বলেননি ‘এটা সম্ভব নয়’। তারা সবসময় বলতেন ‘এটা করতেই হবে।’ তারা কখনও শত্রুকে বলেননি যে আমাদের মানুষ বা সরঞ্জাম নেই; বরং প্রজ্ঞা ও পরিপক্বতার সঙ্গে তারা নিজেদের সব সম্পদ একত্র করেছিলেন।”
গালিবাফ আরও বলেন, ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে হাজারো শহীদের রক্ত ও আত্মত্যাগের পথেই দেশটি অটল থেকেছে, যারা জাতির নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
তিনি ইরানি জাতিকে অভিহিত করেন “একটি জাতি হিসেবে, যারা শহীদ হওয়ার পথ বেছে নিয়েছে।”
তিনি বলেন, “আজ যদি আমাদের প্রিয় দেশ নিরাপদ থাকে, যদি আমরা মর্যাদা ও স্বাধীনতায় অনন্য হই, তবে তা শহীদত্বের সংস্কৃতি এবং আমাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যোদ্ধা ও নানা মত, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের মানুষের আত্মনিবেদন ও অংশগ্রহণের ফল।”
সূত্র: মেহের নিউজ

