স্বপ্ন—এক রহস্যময় জগৎ, যা নিয়ে মানব ইতিহাসে জল্পনা-কল্পনার শেষ নাই। ইসলামি ঐতিহ্য অনুসারে, স্বপ্নের ব্যাখ্যা একটি স্বতন্ত্র জ্ঞান। স্বপ্নের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রামাণিক ব্যক্তিত্ব হলেন প্রখ্যাত ইসলামি মনীষী মুহাম্মদ ইবনে সীরীন (রহ.)। তার সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘তাফসিরুল আহলাম’-এর ওপর ভিত্তি করে স্বপ্নে ‘গান’ দেখার তাৎপর্য নিচে তুলে ধরা হলো, যেখানে সুর ও বার্তার ভেদে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ইঙ্গিত।
১. অর্থবহ গান বা গজল শোনার ইঙ্গিত: স্বপ্নদ্রষ্টা যদি এমন গান বা গজল শোনেন, যা অশ্লীলতামুক্ত ও অর্থবহ, তবে তা অত্যন্ত শুভ ফল বয়ে আনে। এটি সাধারণত ব্যবসায়িক উন্নতি ও সমৃদ্ধি লাভ করার ইঙ্গিত বহন করে। এ ধরনের স্বপ্নকে ইতিবাচক পরিবর্তনের পূর্বাভাস হিসেবে দেখা হয়।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: কোনো কোনো ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, স্বপ্নে গানের গায়কের মাঝে ভবিষ্যতে আলেম, জ্ঞানীগুণী, বিচারপতি বা মন্ত্রী হওয়ার মতো গুণাবলি দেখা যেতে পারে।
২. অশ্লীল বা মন্দ গান শোনার ফল: যদি কেউ স্বপ্নে অশ্লীল বা মন্দ গান শুনতে দেখে, তবে তা ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা। এই স্বপ্নটি সাধারণত লোকসান বা বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে।
ধনী ব্যক্তির ক্ষেত্রে: ধনাঢ্য ব্যক্তি যদি স্বপ্নে দেখে, সে লোকালয়ে বা বাজারে বসে গান শুনছে, তবে তার জীবনে মন্দ কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই স্বপ্ন সম্পদশালীকে নৈতিক স্খলনের বিষয়ে সতর্ক করে।
দরিদ্র ব্যক্তির ক্ষেত্রে: দরিদ্র ব্যক্তি এমন স্বপ্ন দেখলে, দুঃখজনকভাবে এটি তার জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পাওয়ার পূর্বাভাস হতে পারে।
৩. নিজে গান গাওয়ার তাৎপর্য: যদি কোনো ব্যক্তি স্বপ্নে দেখে যে সে নিজে কোথাও গান গাইছে, তবে এটি একটি নেতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এমন স্বপ্ন দেখলে তার শত্রু-মিত্র সবাই তাকে ত্যাগ করার আশঙ্কা থাকে।
বিচ্ছেদ ও অশান্তি: কেউ কেউ বলেছেন, গান ঝগড়া-বিবাদ ও ফ্যাসাদের উন্মেষ ঘটায়। এর পেছনে একটি কারণ হলো—বলা হয়, সর্বপ্রথম ইবলিসই গান ও আর্তনাদ করেছিল। তাই স্বপ্নে নিজে গান গাওয়াকে পারিবারিক বা সামাজিক অশান্তির কারণ হিসেবে দেখা হয়।
ইসলামের পণ্ডিতগণ স্বপ্নকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ, শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং মনের কল্পনা। স্বপ্নের ব্যাখ্যার এই প্রাচীন জ্ঞান কেবল প্রতীকী ও ধারণামূলক, যা চূড়ান্ত নয়। তাই যেকোনো অবস্থায় মহান আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখা এবং সতর্কতা অবলম্বন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত)

