সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বেড়েছে ডলারের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় এক টাকা বেড়ে লেনদেন হচ্ছে এখন ১শ ২২ টাকা ৫০ পয়সার ওপরে। ব্যাংকাররা বলছেন, রোজা উপলক্ষ্যে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া হজের টাকা পরিশোধের চাপ পড়েছে ডলারের ওপর। যে কারণে দাম কিছুটা বাড়তি। তবে শঙ্কার কারণ নেই। বাজারে হস্তক্ষেপ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। আপাতত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির চিন্তা নেই বলেও জানান কর্মকর্তারা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ’র ঋণের শর্ত পূরণে চলতি বছরের মে মাসে বাজারভিত্তিক করা হয় ডলারের বিনিময় মূল্য। এরপর থেকে চাহিদা যোগানের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হচ্ছে দাম। তবে সরবরাহ ভালো থাকায় এতদিন প্রভাব পড়েনি বিনিময় মূল্যে। লেনদেন ১২১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২২ টাকার মধ্যেই ছিল।
তবে সম্প্রতি কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ডলারের দামে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ১ টাকা। লেনদেন হচ্ছে ১২২ টাকা ৬৩ পয়সায়। মূলত আমদানি বৃদ্ধির কারণেই দাম কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৩ মাসে ঋণপত্র খোলা হয়েছে এক হাজার ৭শ’ ৯৭ কোটি ডলারের। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। এছাড়া হজের অর্থ পরিশোধের কারণেও ডলারের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে বলে জানান ব্যাংকাররা।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী খান বলেন, বর্তমানে ডলারের রেট নির্ধারিত হচ্ছে ডিমান্ড ও সাপ্লাইয়ের ওপর। তবে সম্প্রতি এই রেট বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলেন, সামনে রমজান মাস আছে। এ উপলক্ষ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির বিষয়টি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া হজের পেমেন্টের কারণে আমাদের বাড়তি ফরেন কারেন্সি লাগছে।
অপরদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, বায়িং চাপের কারণে প্রাইসটা একটু ঊর্ধ্বমুখী। এছাড়া আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি রমজান শুরু হবে। মূলত এ উপলক্ষ্যে অনেকে এখন থেকেই পণ্য আমদানি জন্য এলসি খুলছেন। ফলে বাজারে একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আর এ কারণেই মূলত ডলারের দামটা বাড়ছে।
ভোগ্য পণ্যের পাশাপাশি শিল্পের কাঁচামাল এবং মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়লেও বাড়বে ডলারের চাহিদা। যার প্রভাব পড়বে বিনিময় মূল্যে। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও আশঙ্কার কিছু নেই বলে মনে করেন ব্যাংকাররা। আগামী মাসের শুরুতে দাম কমে আসবে বলেও আশা বাংলাদেশ ব্যাংকের।
ডলারের রেট বৃদ্ধির ফলে ঝুঁকির বিষয়ে শওকত আলী খান বলেন, আমরা আপাতত কোনো শঙ্কা ফিল করছি না। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ডিমান্ড এন্ড সাপ্লাইয়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ডলারের দাম। সেক্ষেত্রে তাদের কোনো ইন্টারফেয়ারেন্স নেই। তবে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সাজেশন দিতে পারে বলেও জানান তিনি।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে বেশি রেমিট্যান্স এসে থাকে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ওখানে মাসের শেষদিকে আমাদের এমপ্লয়িরা টানাপোড়েনের মধ্যে থাকে। যার ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ মাসের শেষ প্রান্তে এসে কমে যায়। আগামী মাসের শুরুর দিকে যখন আবার বাড়বে, তখন এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আবার নেমে আসবে।
অপরদিকে, ডলারের দাম বাড়লেও হস্তক্ষেপ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। রিজার্ভ থেকে আপাতত ডলার বিক্রির সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

