সম্প্রতি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এতে বহু ব্যবসায়ী পথে বসার অবস্থা হয়েছে। এই দুর্ঘটনা যেমন রাষ্ট্রকে বড় সংকটের মুখে ফেলেছে তেমনি চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে বহু ব্যবসায়ী ও কর্মী। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কারো কাছে নেই।
তাদের পুনর্বাসন করে আগের অবস্থানে ফেরানোর সামর্থ্য ও মনোবল হয়ত কারো হবে না। এ ধরনের পরিস্থিতি মানুষকে মনে করিয়ে দেয়, সর্বক্ষেত্রে একমাত্র মহান আল্লাহই আমাদের ভরসা। তিনি ছাড়া আমাদের আর কোনো আশ্রয়স্থল নেই।
আমাদের যেকোনো সমস্যার সমাধান একমাত্র তার কাছেই আছে। তাই জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতিতে একমাত্র তার কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত। বিপদের দিনে তার কাছে সাহায্য চাইলে সে বিপদ মানুষের জন্য কল্যাণে পরিণত হয়। এর প্রতিফলন মানুষ ইহকাল ও পরকালে অবলোকন করে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব (কখনও) কিছুটা ভয়-ভীতি দ্বারা, (কখনও) ক্ষুধা দ্বারা এবং (কখনও) জান-মাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদেরকে, যারা (এরূপ অবস্থায়) সবরের পরিচয় দেয়।
যারা তাদের কোনো মুসিবত দেখা দিলে বলে ওঠে, ‘আমরা সকলে আল্লাহরই এবং আমাদেরকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিশেষ করুণা ও দয়া রয়েছে এবং এরাই আছে হিদায়েতের উপর।’ (সুরা বাঁকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৭)
এই আয়াতগুলোতে প্রথমত মহান আল্লাহ তার বান্দাদের দুনিয়াবি পরীক্ষার পূর্বাভাস দিয়েছেন, যার অন্যতম অংশ হলো জান-মাল বা সম্পদের ক্ষতি। ফলে দুনিয়ার সাময়িক বিপদে মুমিন ভেঙে পড়বে না। কারণ বিপদের মাধ্যমে পরীক্ষার ঘোষণা মহান আল্লাহ আগেই দিয়েছেন।
মানুষ তার দুনিয়ার জীবনে মাঝে মাঝে এ সংক্রান্ত পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তখন যারা মহান আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী তার ওপর আস্থা রাখবে এবং ধৈর্য ধরবে তাদের জন্য সুসংবাদ। মহান আল্লাহ তখন তাদের ক্ষতির বিপরীতে বহু গুণে প্রতিদান দেয়।
মহানবী (সা.)-এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কোনো বান্দার ওপর মুসিবত আসলে যদি সে বলে ‘ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলায়হি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজুরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ লী খয়রাম মিনহা’ অর্থাৎ- আমরা আল্লাহর জন্যে এবং আমরা তারই কাছে ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমাকে এ মুসিবতের বিনিময় দান করুন এবং এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করুন।’
তবে আল্লাহ তাকে তার মুসিবতের বিনিময় দান করবেন এবং তাকে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করবেন। উম্মে সালামাহ (রা.) বলেন, এরপর যখন আবু সালামাহ ইন্তেকাল করলে আমি এরূপ দোয়া করলাম, যেরূপ রাসুলুল্লাহ (সা.) আদেশ করেছেন। অতঃপর মহান আল্লাহ আমাকে তার চেয়েও উত্তম নিয়ামত অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে স্বামীরূপে দান করলেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০১২)
সুবহানাল্লাহ! যদি কেউ বিপদে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারে, তবে মহান আল্লাহ তার জন্য কল্যাণের দরজা খুলে দেবেন। সে যা হারিয়েছে, এর চেয়ে বহু গুণে প্রতিদান দেবেন। পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আবু সাঈদ খুদরি (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪১)
তাই যে কোনো বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধরে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত, ইনশাআল্লাহ, মহান আল্লাহ দুনিয়া-আখিরাতে এর বিনিময়ে কল্যাণের দ্বার খুলে দেবেন।

