চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপে দেশটির দুই কর্মকর্তাসহ নয়জন শীর্ষ জেনারেলকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। একই সঙ্গে তাদের সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দিয়ে সামরিক বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, তারা গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত।
বিবিসির খবরে বলা হয়, শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ওই দুই শীর্ষ কর্মকর্তাসহ মোট নয়জন জেনারেলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কয়েক দশকের মধ্যে চীনের সামরিক বাহিনীতে এটাই দুর্নীতির অভিযোগে সবচেয়ে বড় দমনমূলক অভিযান।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, তদন্তে দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই দলীয় আদেশ অনুযায়ী তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে এবং সামরিক বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়েছে। চীনা সামরিক বাহিনীতে কয়েক দশকের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় শুদ্ধি অভিযান বলে মনে করা হচ্ছে।
যে নয়জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে তারা হলেন— সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের (সিএমসি) ভাইস চেয়ারম্যান হি ওয়েইডং, সিএমসির রাজনৈতিক বিভাগের পরিচালক মিয়াও হুয়া, একই বিভাগের নির্বাহী উপপরিচালক হে হংজুন, সিএমসির জয়েন্ট অপারেশন কমান্ড সেন্টারের নির্বাহী উপপরিচালক ওয়াং জিউবিন, ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডার লিন জিয়াংইয়াং, সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার কিন শুতং, নৌবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার ইয়ুআন হুয়াজি, রকেট ফোর্সেস কমান্ডার ওয়াং হৌবিন এবং আর্মড পুলিশ ফোর্স কমান্ডার ওয়াং চুনিং।
এদের মধ্যে হি ওয়েইডং বিশেষভাবে আলোচনায় রয়েছেন। তিনি চীনের সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং শি জিনপিংয়ের পর সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। মার্চ মাসে শেষবার প্রকাশ্যে দেখা যাওয়ার পর থেকেই তার রহস্যজনক অনুপস্থিতি নিয়ে জল্পনা চলছিল। অবশেষে তার বিরুদ্ধে তদন্তের খবর নিশ্চিত হলো। তিনিই প্রথম পলিটব্যুরো সদস্য যিনি এ ধরনের সামরিক তদন্তের মুখোমুখি হলেন।
শুধু সামরিক নেতৃত্বই নয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও শুদ্ধি অভিযানের মুখে পড়েছেন। গত বছর রহস্যজনকভাবে বরখাস্ত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং। তার উত্তরসূরি লিউ জিয়ানচাওকেও দীর্ঘদিন ধরে জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংহে এবং লি শাংফুসহ রকেট ফোর্স ইউনিটের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ফেলো নীল থমাসের মতে, শি জিনপিংয়ের এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান মূলত নিজের রাজনৈতিক প্রভাব শক্তিশালী করার কৌশল। তিনি বলেন, শি জিনপিংয়ের দৃষ্টিতে দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি মানে দলীয় সংগঠনকে ‘বিপ্লবীভাবে শৃঙ্খলায় আনা’ এবং নিজের ক্ষমতার ভিত্তিকে দীর্ঘমেয়াদে শক্তিশালী করা।
চীনা সামরিক বাহিনীর এই বড় পরিবর্তন এমন সময় এলো যখন আগামী ২০ অক্টোবর শুরু হতে যাচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন। তাই শুদ্ধি অভিযানের এই ঢেউ আগামী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

