মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁরই ইবাদতের জন্য। তাঁর নির্দেশিত পদ্ধতিতে ইবাদত করার মধ্যেই তিনি তাঁর বান্দাদের ইহকালীন ও পরকালীন সুখ, সমৃদ্ধি ও সফলতা লুকিয়ে রেখেছেন। যে ব্যক্তি ইবাদতের প্রকৃত অর্থ জানে এবং তার স্বাদ অনুভব করতে শুরু করে, সে তার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানোর চেষ্টা করে।
ইবাদত কী: একবার ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ.)-কে কেউ একজন প্রশ্ন করনে, ইবাদত বলতে কী বোঝায়? এর শাখা-প্রশাখা কী কী? পুরো দ্বীন কি এর অন্তর্ভুক্ত? আল্লাহর দাসত্ব বা আল্লাহর বন্দেগির বাস্তবতা কী? এটি কি দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বোচ্চ অবস্থান? নাকি এর উপরে আরও কোনো মর্যাদা আছে? এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিন। তিনি উত্তরে বলেন, ইবাদত এমন একটি পরিপূর্ণ নাম, যা আল্লাহ তায়ালা যেসব কথা ও কাজ ভালোবাসেন ও সন্তুষ্ট হন, সবই এর অন্তর্ভুক্ত, তা হোক অন্তরের কাজ বা বাহ্যিক কাজ। নামাজ, জাকাত, রোজা, হজ, সত্য কথা বলা, আমানত আদায় করা, মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, অঙ্গীকার পূরণ করা, সত্কাজের আদেশ, অসত্ কাজের নিষেধ, কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ, প্রতিবেশী, এতিম, মিসকিন, দাস ও পশুর প্রতি দয়া করা, দোআ করা, আল্লাহর স্মরণ (জিকির), কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি, সবই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়াও আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ভালোবাসা, আল্লাহভীতি, তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন, তাঁর হুকুমের প্রতি ধৈর্য ধরা, তাঁর নেয়ামতের জন্য শোকর আদায়, তাঁর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকা, তাঁর ওপর ভরসা করা, তাঁর রহমতের আশা করা, তাঁর শাস্তির ভয় করা, এসবও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। এ হিসেবে বলা যায়, বান্দার প্রতিটি আনুগত্যই তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের সুখ, সমৃদ্ধি ও সফলতার পথে নিয়ে যায়।
প্রতিটি মানুষই নিজের জীবনকে উপভোগ্য করতে চায়। যে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত চায়, তার উচিত এমন কিছুতে সুখ বা তৃপ্তি খোঁজার চেষ্টা করা, যা কেবল আল্লাহর ভালোবাসা, তাঁর প্রতি নির্ভরতা ও আনুগত্যের মাধ্যমে পাওয়া যায়। তাইতো মুমিন বান্দা আল্লাহকে খুশি করতে সর্বদা নেক আমলে লিপ্ত থাকার চেষ্টা করে। কেননা নেক আমলের পুরস্কার দুনিয়া-আখিরাত উভয় জাহানে পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব। (সুরা নাহাল, আয়াত : ৯৭)
যাদের মহান আল্লাহ পবিত্র জীবন দান করবেন, তারা ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে। মহান আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতে পরম শান্তি অনুভব করবে, যা তাদের দুনিয়া ও আখিরাতকে সুসজ্জিত করবে। ইমানের স্বাদ সম্পর্কে ইবনে রজব (রহ.) বলেন, ইমানেরও এক ধরনের স্বাদ আছে, যা হূদয়ে অনুভূত হয়। খাবারের স্বাদ যেমন মুখে অনুভূত হয়। তেমনি ঈমানের স্বাদ হূদয়ে অনুভূত হয়। ইমান হলো হূদয়ের খাদ্য। অসুস্থ ব্যক্তি যেমন খাবারের স্বাদ পায় না, তেমনি পাপ ও কুপ্রবৃত্তিতে আক্রান্ত হূদয় ইমানের স্বাদ পায় না। মহানবী (সা.) বলেছেন, ব্যভিচারী ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত থাকাবস্থায় মুমিন থাকে না। (মুসলিম, হাদিস : ১০৬)
অর্থ্যাৎ যদি তার পূর্ণ ইমান থাকত, তবে সে ইমানের স্বাদে মগ্ন থাকত এবং পাপের স্বাদ ঘৃণা করত। ইমানের এই শক্তি ও তৃপ্তি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত করেছেন। আর তোমাদের কাছে কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে অপছন্দনীয় করে দিয়েছেন। তারাই তো সত্য পথপ্রাপ্ত। (সুরা হুজরাত, আয়াত : ৭)
তাই ঈমানের স্বাদ পেতে হলে নিজেকে মহান আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিচালিত করতে হবে। কোরআন-হাদিসের দৃষ্টি পছন্দনীয়, তাই নিজের প্রিয় করে নিতে হবে। যা কিছু ইসলামে নিষিদ্ধ ও নিন্দনীয় তাকে থেকে নিজেকে দূরে রাখার পাশাপাশি তা ঘৃণা করতে হবে। মহানবী (সা.)-কে ভালোবেসে তাঁর সুন্নতকে আঁঁকড়ে ধরতে হবে। ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ ঈমানকে পরিপূর্ণ করবেন। অন্তরকে হেদায়েতের আলোয় আলোকিত করবেন। ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্তরে এক ধরনের প্রশান্তি তৈরি হবে। ইবাদতে অন্তর শীতল হবে।