সারা দেশে ক্রমেই আলোচিত স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া রোগের সংক্রমণ বাড়ছে বলে সতর্ক করেছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা। এটি একটি ছোঁয়াচে চর্মরোগ, যা Sarcoptes scabiei নামক ক্ষুদ্র পরজীবীর মাধ্যমে ত্বকের নিচে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক সচেতনতা ও দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ সহজেই প্রতিরোধযোগ্য।
কোথায় বেশি হচ্ছে সংক্রমণ?
চিকিৎসকদের মতে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, শরণার্থী শিবির, ছাত্রাবাস, কারাগার, অভাবী ও নিম্নআয়ের মানুষজনের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। কিছু হাসপাতালে প্রতিদিনই স্ক্যাবিস আক্রান্ত নতুন রোগী আসছেন।
কেন বাড়ছে সংক্রমণ?
একই বিছানা, পোশাক বা তোয়ালে ব্যবহার
দীর্ঘসময় একই জামা-কাপড় পরে থাকা
আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শারমিন সুলতানা বলেন, অনেকেই এটিকে সাধারণ চুলকানি ভেবে অবহেলা করেন। কিন্তু স্ক্যাবিস দ্রুত ছড়ায় এবং পরিবারের সবাইকে আক্রান্ত করতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন আপনি স্ক্যাবিসে আক্রান্ত?
রাতের বেলায় তীব্র চুলকানি
আঙুলের ফাঁকে, কনুই, কোমর, নাভি, কুঁচকি ও কুচকির চারপাশে চুলকানি
শিশুদের ক্ষেত্রে মাথা ও মুখেও হতে পারে
বাঁচতে যা করবেন:
১. ডাক্তারের পরামর্শ নিন
স্ক্যাবিস নিরাময়ে পারমেথ্রিন ৫% ক্রিম বা নির্দিষ্ট ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। এটি সারা শরীরে (গলা থেকে নিচে) মেখে অন্তত ৮–১২ ঘণ্টা রাখতে হয়।
২. সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা দিন
পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা করাতে হবে, নইলে রোগ বারবার ফিরে আসবে।
৩. পোশাক-চাদর গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকান
ব্যবহৃত কাপড়, তোয়ালে, বালিশ ও চাদর ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে।
৪. ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
নিয়মিত গোসল করুন, পরিষ্কার জামাকাপড় পরুন এবং অন্যের ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৫. বালিশ, চাদর বা ম্যাট্রেস ভাগাভাগি করা থেকে বিরত থাকুন।
চিকিৎসা না নিলে কী হতে পারে?
চুলকানি, ইনফেকশন, ত্বকে ঘা ও দাগ— এমনকি পরিবারের সবাই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কিছু ক্ষেত্রে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিচ্ছেন, স্ক্যাবিস হলে লুকানোর কিছু নেই, বরং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিয়ে তা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে হবে। সচেতনতা ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।