ইসলামে জিকরুল্লাহ তথা আল্লাহর স্মরণ ও তার নাম উচ্চারণের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা অত্যন্ত গভীর শিক্ষা বহন করে। নিচের হাদিসটি দেখুন-
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرِ أَعْمَالِكُمْ وَأَزْكَاهَا عِنْدَ مَلِيكِكُمْ وَأَرْفَعِهَا فِي دَرَجَاتِكُمْ وَخَيْرٌ لَكُمْ مِنْ إِنْفَاقِ الذَّهَبِ وَالْوَرِقِ وَخَيْرٌ لَكُمْ مِنْ أَنْ تَلْقَوْا عَدُوَّكُمْ فَتَضْرِبُوا أَعْنَاقَهُمْ وَيَضْرِبُوا أَعْنَاقَكُمْ ” . قَالُوا بَلَى . قَالَ ” ذِكْرُ اللَّهِ تَعَالَى ” . فَقَالَ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ رضى الله عنه مَا شَيْءٌ أَنْجَى مِنْ عَذَابِ اللَّهِ مِنْ ذِكْرِ اللَّهِ
আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি তোমাদেরকে কি তোমাদের অধিক উত্তম কাজ প্রসঙ্গে জানাব না, যা তোমাদের মনিবের নিকট সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সম্মানের দিক হতে সবচেয়ে উঁচু, স্বর্ণ ও রৌপ্য দান-খাইরাত করার চেয়েও বেশি ভাল এবং তোমাদের শত্রুর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে তোমাদের সংহার করা ও তোমাদেরকে তাদের সংহার করার চাইতেও ভাল? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন: আল্লাহ তাআলার জিকির।
মুআয ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, আল্লাহ তাআলার শাস্তি হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার জিকিরের তুলনায় অগ্রগণ্য কোন জিনিস নেই।
হাদীস ব্যাখ্যা
আবু দারদা (রা.)-এর হাদিসের শিক্ষা হচ্ছে- রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশে এমন কিছু তুলনা করেছেন, যা তাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হত—
সোনা-রুপা দান করা : সমাজে এটি ছিল বিরাট কল্যাণমূলক কাজ, যার মাধ্যমে দরিদ্ররা উপকৃত হয়।
জিহাদ বা শত্রুর মোকাবিলা করা : ইসলামের রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগ।
কিন্তু নবি (সা.) এদুটোর উপনা টেনে সাহাদের জানালেন যে, এর চেয়েও উত্তম হলো আল্লাহর জিকির।
অর্থাৎ, বাহ্যিক ইবাদত, অর্থ দান কিংবা জিহাদ সবই মহৎ কাজ; কিন্তু এগুলোর প্রাণশক্তি হলো আল্লাহর জিকির বা স্মরণ। এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, জিকির মানুষকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেয়। জিকির মানুষকে পাপ থেকে রক্ষা করে। জিকির মানুষকে নামাজ, সাদাকা ও জিহাদের ভেতরকার আত্মিক স্বাদ উপলব্ধি করায়।
হাদিসের শেষাংশে মুআয ইবন জাবাল (রা.)-এর বাণী আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জিকিরের মতো শক্তিশালী কিছু নেই।
অর্থাৎ— কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য আসল ঢাল ও নিরাপত্তা হবে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা।জিকির মানুষের হৃদয়কে কলুষতা থেকে পবিত্র রাখে, ফলে আল্লাহর গজব থেকে সে বেঁচে যায়। জিকির মানুষের হিসাবকে সহজ করে দেয় এবং শিরক, গুনাহ ও অবহেলা থেকে রক্ষা করে।
কোরআনের সাথে সামঞ্জস্য
কোরআনুল কারিমে আল্লাহ বলেন—
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ
তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করব। (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৫২)
أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমেই অন্তর প্রশান্ত হয়।’ (সুরা আর-রা‘দ, আয়াত : ২৮)
এ থেকে বোঝা যায়— জিকির কেবল জিহ্বার উচ্চারণ নয়; বরং হৃদয়ের সজিবতা, আল্লাহর প্রতি ভরসা ও ভালোবাসা জাগ্রত করার নাম।
প্রতিটি ফরজ নামাজের পর মহানবি (সা.) যেমন জিকির করতেন, আমরাও তেমনভাবে করা উচিত। দিনের কাজকর্মে, গাড়ি চালানোর সময়, বাজারে, অফিসে, এমনকি ঘুমানোর আগে— সবক্ষেত্রে আল্লাহকে স্মরণ করা যায়। দোয়া, তাসবিহ, তাহমিদ, তাকবির, কোরআন তিলাওয়াত এ সবগুলোই জিকিরের অংশ। যদি আমরা এতে অভ্যস্ত হতে পারি তাহলে অন্তরে প্রশান্তি, আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি মিলবে, দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মান বৃদ্ধি পাবে।