ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস জানিয়েছে, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ফিলিস্তিনের প্রেক্ষাপটে ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’। সংগঠনটির দাবি, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে এখনো কোনো প্রস্তাব তারা পায়নি।
রোববার হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ সদস্য হুসাম বদরান টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন।
ইসরায়েলের দৈনিক হা’আরেতজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন গাজায় একটি অস্থায়ী প্রশাসনের প্রধান হিসেবে ব্লেয়ারকে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বদরান বলেন, ব্লেয়ারকে ঘিরে যেকোনো পরিকল্পনা ‘ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য অশুভ সংকেত’।
তিনি ব্লেয়ারকে ‘শয়তানের ভাই’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘তিনি ফিলিস্তিনি ইস্যু, আরব কিংবা মুসলমানদের কোনো কল্যাণ বয়ে আনেননি। বরং তার অপরাধী ও ধ্বংসাত্মক ভূমিকা বহু বছর ধরে পরিচিত।’ বদরান আরও বলেন, ব্লেয়ারকে আন্তর্জাতিক আদালতে দাঁড় করানো উচিত, বিশেষ করে ইরাক যুদ্ধের (২০০৩–২০১১) জন্য।
গাজা বা পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো জাতীয় ঐক্যমতের মাধ্যমেই নির্ধারিত হওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোনো আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক পক্ষের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব না। ফিলিস্তিনি জনগণ নিজেদের বিষয় নিজেরাই পরিচালনা করতে সক্ষম।’
বদরান জানান, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরেই হামাস অভ্যন্তরীণভাবে সিদ্ধান্ত নেয়—তারা এককভাবে গাজা শাসন করতে চায় না। এ সিদ্ধান্ত অন্যান্য ফিলিস্তিনি দল ও মিত্র রাষ্ট্রগুলোকেও জানানো হয়েছিল।
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাইনি। সবকিছু শুধু গণমাধ্যমে ঘুরছে, ট্রাম্প কিংবা অন্য কারও নাম জুড়ে দেওয়া হচ্ছে।’
হামাসের দাবি, গত ৯ সেপ্টেম্বর কাতারের দোহায় সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের ওপর ইসরায়েলের ব্যর্থ হত্যাচেষ্টার পর থেকে যুদ্ধবিরতি সংলাপ স্থগিত আছে।
এর আগে, ১৮ আগস্ট হামাস এক মধ্যস্থতাকারীর আনা আংশিক যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় প্রস্তাবে সম্মত হলেও ইসরায়েল কোনো সাড়া দেয়নি। অথচ ওই প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফের উদ্যোগে তৈরি এবং তেলআবিব কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ছিল।
এদিকে ইসরায়েলের বিরোধী দল ও যুদ্ধবন্দিদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রাজনৈতিক টিকে থাকার স্বার্থে যুদ্ধবিরতির যেকোনো সম্ভাবনাকে আটকে দিচ্ছেন। তিনি বর্তমানে দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত, দোষী সাব্যস্ত হলে কারাদণ্ড হতে পারে। পাশাপাশি গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। লাগাতার বোমাবর্ষণে এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে; দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ ও মহামারির আশঙ্কা।