প্রকৃত মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করতে হলে হালাল জীবিকা উপার্জনের বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে ঈমানদাররা, তোমাদের আমি যেসব পবিত্র রিজিক দিয়েছি, তা থেকে আহার করো। পাশাপাশি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করো, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করে থাকো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭২)
যুগে যুগে নবী-রাসুলদের বৈধভাবে উপার্জন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুলরা! তোমরা পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করো এবং নেক কাজ করো।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৫১)
উল্লিখিত দুই আয়াত থেকে কয়েকটি বিষয় জানা যায়—এক. প্রত্যেক মুমিনের উপার্জন বৈধ হতে হবে। দুই. পবিত্র খাবার গ্রহণ করতে হবে। তিন. যারা সরাসরি উপার্জন করতে পারে না, বরং অন্যের উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্যও একই বিধান প্রযোজ্য।
তাই কখনো যদি এমন হয় যে উপার্জনকারীর উপার্জন অবৈধ, অন্যদিকে তার ওপর কিছু মানুষ নির্ভরশীল—এক্ষেত্রে ইসলামের (হালাল উপার্জনমূলক) বিধান ও মানুষের একান্ত প্রয়োজনীয়তার মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে।
আর যখন ইসলামের বিধান ও মানুষের প্রয়োজনীয়তার মাঝে সংঘর্ষ হয়, তখন ইসলাম মানুষের প্রয়োজনীয়তাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এ জন্যই যদি প্রাণ ওষ্ঠাগত অবস্থায় হালাল খাবার না পায় তখন প্রয়োজন পরিমাণ হারাম খাওয়ারও অনুমতি আছে। শুধু অনুমতিই নয়; বরং বাধ্যতামূলক নির্দেশ। কেননা, খাবার শুধু স্বভাবগত প্রয়োজনই নয়, বরং ধর্মীয় প্রয়োজনও। তাই প্রয়োজনসত্ত্বেও না খেলে যেমনিভাবে সে স্বভাবগত চাহিদার গলা টিপে ধরল, তদ্রুপ ইসলামেরও বিরুদ্ধাচরণ করল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত এবং গায়রুল্লাহর নামে জবাইকৃত প্রাণী। তবে যে নিরুপায় হবে, অবাধ্য বা সীমা লঙ্ঘনকারী না হয়ে, তাহলে তার গুনাহ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭৩)
এবার আসি, যদি পরিবারের প্রধান অভিভাবক বা স্বামীর উপার্জন হারাম হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির স্ত্রীর জন্য জরুরি হলো স্বামীকে হারাম উপার্জনের পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা অব্যাহত রাখা। কিন্তু স্ত্রীর আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও যদি স্বামী হারাম উপার্জন ত্যাগ করতে রাজি না হয়, তাহলে স্ত্রীর যদি বৈধ জীবিকার ব্যবস্থা থাকে, তিনি সেখান থেকে জীবনধারণের ব্যবস্থা করবেন। তার জন্য স্বামীর হারাম সম্পদ খাওয়া জায়েজ হবে না।
কিন্তু যদি স্ত্রীর বৈধ জীবিকার ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে স্বামীর সম্পদ থেকে খাওয়া তার জন্য জায়েজ হবে। তবে হারাম সম্পদ খাওয়ার গোনাহ স্বামীর ওপর বর্তাবে।
আর অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু-সন্তানদের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। তবে প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরা নিজে উপার্জন করে খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করবে। পিতার সম্পদ থেকে খাওয়া-দাওয়া করবে না। এ বিষয়ে আল্লামা ইবনে আবেদিন (রহ.) লেখেন : ‘যদি স্বামী খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম সম্পদের দ্বারা কিনে নিয়ে আসে, তাহলে স্ত্রীর জন্য তা খাওয়া এবং পরিধান করা জায়েজ হবে। তবে এই কাজের গোনাহ স্বামীর ওপর বর্তাবে।’ (ফাতাওয়া শামী : খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ১৯১)