spot_img

প্রতিরক্ষা চুক্তি করলো সৌদি-পাকিস্তান, অসন্তুষ্ট মিশর

অবশ্যই পরুন

দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় আফ্রিকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় দেশ মিশর। সামাজিক মাধ্যমে অনেক মিশরীয় নাগরিক প্রশ্ন তুলছেন— কেন সৌদি আরব মিশরকে উপেক্ষা করে পাকিস্তানের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি করলো?

বিতর্কের সূচনা ঘটে ১৬ সেপ্টেম্বর কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত আরব-ইসলামিক সম্মেলনের পর। ওই সম্মেলনে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি প্রস্তাব দেন, মুসলিম ও আরব দেশগুলোর মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতে সমন্বয়ের ভিত্তিতে একটি যৌথ জোট গঠনের।

কিন্তু এর পরদিনই সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে সফরকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শহবাজ শরিফের উপস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে একটি ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়।

এই চুক্তির আওতায় এক দেশ আক্রান্ত হলে তা অপর দেশের ওপরও আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে। চুক্তির মূল উদ্দেশ্য যৌথ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা ও সামরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করা।

চুক্তির ঘোষণার পর থেকেই মিশরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা প্রশ্ন তোলেন, কেন দোহা সম্মেলনে সৌদি আরব আরব রাষ্ট্রগুলোর সম্মিলিত প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করলো না? কেন ২০১৫ সালে মিশরের প্রস্তাবিত একীভূত আরব সেনাবাহিনী গঠনের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছিল?

একজন মন্তব্য করেন, সৌদি আরব কেন মিশরের সঙ্গে এমন চুক্তি করলো না? তারা কি নিজেদের শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে চায় না? এমন প্রশ্ন উঠছে নানা মহল থেকে।

কেন পাকিস্তানকে বেছে নিল সৌদি?

বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি আরবের এমন সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে কৌশলগত ও বাস্তব কারণ। পাকিস্তান বিশ্বের নয়টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের একটি। দেশটির হাতে রয়েছে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড এবং শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ডেলিভারি ব্যবস্থা, যা তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে তুলে ধরে।

চুক্তির ফলে সৌদি আরব কার্যত পাকিস্তানের পারমাণবিক ছাতার আওতায় আসতে পারবে। এটি একটি অ-পারমাণবিক দেশের জন্য বড় রকমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দোহায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে।

এ প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব পশ্চিমা মিত্রদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প কৌশলগত অংশীদার খুঁজছে।

মিশরীয় গবেষক আহমেদ আব্দেল মেগুইদ বলেন, ইসরায়েলের দোহা হামলা সৌদি আরবকে শিক্ষা দিয়েছে। তাই এখন তারা বিভিন্ন দিক থেকে প্রতিরক্ষা জোট গঠনে উদ্যোগ নিচ্ছে।

তাহলে মিশরকে বাদ দেওয়া হলো কেন?

যদিও মিশরের রয়েছে আরব বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি উন্নত অস্ত্রভাণ্ডার, তবুও তাদের কাছে নেই কোনো পারমাণবিক অস্ত্র। ফলে মিশরের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করলে তা কেবল প্রচলিত সামরিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল হতো, যেখানে সৌদি আরব উচ্চতর প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুঁজছে।

অবসরপ্রাপ্ত মিশরীয় জেনারেল হাসান রাশিদ বলেন, মিশর ও সৌদি আরবের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা অনেক ভালো পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু নতুন একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি আঞ্চলিক কিছু রাষ্ট্রের কাছে ভুল বার্তা দিতে পারে।

এছাড়া মিশর দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র, প্রতিবছর পায় প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা। একই সঙ্গে দেশটি ন্যাটো ও অন্যান্য পশ্চিমা নিরাপত্তা কাঠামোর অংশ। এই প্রেক্ষাপটে, সৌদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তি করলে কায়রোর জন্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে যেতে পারে।

ইতিহাসের দিক থেকেও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন রয়েছে। ষাটের দশকে ইয়েমেন যুদ্ধে মিশরীয় সেনারা সৌদি-সমর্থিত রাজতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। পাশাপাশি মিশরের প্যান-আরব জাতীয়তাবাদী নেতৃত্ব ও সৌদির উপসাগর-কেন্দ্রিক নীতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই মতপার্থক্য রয়েছে।

ভবিষ্যতের প্রভাব

বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ভবিষ্যতে তুরস্কসহ আরও কিছু মুসলিম দেশ এতে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এতে ভারত ও ইসরায়েলের উদ্বেগ বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।

সৌদি কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, এই চুক্তি কোনো বিশেষ ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্কের একটি স্বাভাবিক সম্প্রসারণ।

সূত্র: দ্য নিউ আরব

সর্বশেষ সংবাদ

বাঁচা মরার ম্যাচে টস জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ

সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এই ম্যাচে জয় পেলে কোনো হিসাব-নিকাশ ছাড়াই ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ হবে বাংলাদেশ।...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ