মানুষের অন্যতম মানসিক চাহিদা অন্যের সঙ্গ লাভ। কিন্তু কখনো মানুষ পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে থেকেও একাকী অনুভব করে। একাকিত্ব জীবনের এক রহস্যাবৃত অধ্যায়। এক দিনে কেউ একা হয়ে যায় না; বরং একাকিত্বের দিকে জীবন গড়ায় অবহেলা, অপমান বা অতি নিকটতমদের অপছন্দের মাত্রা ছাড়ায় যখন।
আবার কেউ কেউ হয়তো জানেই না কেন একাকিত্ব অনুভূত হয়। প্রযুক্তির বিকাশের এ যুগে একাকিত্ব থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষ দ্বারস্থ হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের। প্রযুক্তিগতভাবে মানুষ কাছাকাছি এলেও প্রকৃত যোগাযোগ এবং সহানুভূতির অভাব মানুষ কে আরো একাকী করে তুলছে। বর্তমানে এটি যেন মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) একাকিত্বকে স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করছে। একাকিত্বের দীর্ঘস্থায়িতা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে। কখনো কখনো একাকিত্বের ভুক্তভোগী ব্যক্তি নেশা বা আত্মহত্যার পথেও ধাবিত হয়। জীবনের চরম সংকটময় মুহূর্তে নিজের আত্মবিশ্বাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
একাকিত্বের যন্ত্রণা উপশম করে নিজের মধ্যে প্রশান্তি নিয়ে আসতে ইসলাম অনেক উপায় বাদলে দিয়েছে, যেগুলো অনুসরণ করে সুফল পেতে পারেন।
মনোযাতনা মুক্ত হতে মহান আল্লাহর প্রতি ভরসার বিকল্প নেই। কেননা তিনিই বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’
(সুরা : তালাক, আয়াত : ৩)
নামাজে একাগ্রতা
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার সাহায্য প্রার্থনা করো। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন; কিন্তু সেসব বিনয়ী লোকের পক্ষেই সম্ভব।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৪৫)
হাদিসে এসেছে, আমাদের প্রিয় নবী (সা) যখন কোনো কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতেন, তখন নামাজ আদায় করতেন। সাহাবায়ে কেরামদেরও অভ্যাস ছিল তাঁরা অতি সামান্য বিষয়ের জন্য নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন, এমনকি জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও। কারণ তাঁরা জানতেন, এক আল্লাহর পক্ষ থেকেই সব কিছুর সমাধান আসে।
দোয়া
তিলাওয়াত ও জিকির
কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে। কোরআন মহান আল্লাহর বাণী। কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে রবের সঙ্গে কথোপকথন করা যায়। তা ছাড়া জিকিরের মাধ্যমেও রবের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইতিকাফ
ইতিকাফ এমন ইবাদত, যেখানে মুমিন ব্যক্তি জাগতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে আলাদা রেখে নির্দিষ্ট কিছুদিন ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন। ইতিকাফের মাধ্যমে জাগতিক একাকিত্ব দূরে রেখে মহান আল্লাহর সঙ্গে একান্ত সময় কাটানো যায়, যা বাহ্যিক একাকিত্বের অনুভূতিকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে সহায়তা করে।
সামাজিকতা
ইসলামে জামাতবদ্ধতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এমনকি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতে আদায় ফরজ করা হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া উপকারী বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে মেশার ওপর ইসলামে জোর দেওয়া হয়েছে।
একজন মুমিনের জন্য একাকিত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ। যার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও নৈকট্য গভীর হয়। একাকিত্ব আপনাকে গড়ে তুলতে পারে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে।