বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং ডেল্টা লাইফ সাইন্সেস পিএলসি-এর মধ্যে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এনএসইজেড) মোট ৩০ একর জমি বরাদ্দের জন্য জমি লিজচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেজা কার্যালয়ে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ডেলটা ফার্মা লিমিটেড দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। ডেলটা ফার্মা লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। তবে, ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর নতুন ব্যবস্থাপনার অধীনে কোম্পানিটি তার কার্যক্রম পুনরায় চালু করে এবং ২০০৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর এটি একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়।
ডেলটা ফার্মা লিমিটেডের কারখানাটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেস (জিএমপি) এবং আইএসও ৯০০১ : ২০১৫ এর মানদন্ড অনুসরণ করে পরিচালিত হয়। এখানে ১০৯টির বেশি ধরনের জেনেরিক ওষুধ তৈরি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের প্রায় ১৫টি দেশে ঔষধ রপ্তানি করে থাকে।
ডেল্টা লাইফ সাইন্সেস, যা ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের একটি সহপ্রতিষ্ঠান, দেশের উদীয়মান ওষুধ শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন উৎপাদন সুবিধা স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। এটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করবে এবং জাতীয় অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যখাতে অবদান রাখবে। জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রতিষ্ঠানটি ক্রমবর্ধমান দেশীয় ও বৈশ্বিক চাহিদা পূরণের জন্য বিশেষায়িত ঔষধ উৎপাদনে কাজ করবে। প্রতিষ্ঠানটি এখানে প্রায় ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং প্রায় ৭০০ প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
উল্লিখিত প্রকল্পে প্রতিষ্ঠানটি নিম্নোক্ত সুবিধাসমূহ স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে:
ক) বায়োফার্মাসিউটিক্যাল ফিল-ফিনিশ এন্ড ফর্মুলেশন ফ্যাসিলিটি, খ) অন্কলোজি (ইঞ্জেক্টেবল এন্ড ওরাল সলিড ডোসেজ ফর্ম) ফেসিলিটি , গ) হারবাল, নিউট্রাসিউটিক্যাল, এন্ড ন্যাচারাল মেডিসিন ফেসিলিটি, ঘ) একটিভ ফার্মাসিউটিকাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) ম্যানুফ্যাকচারিং ফেসিলিটি, ঙ) ম্যানুফ্যাকচারিং ফেসিলিটি উইথ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), চ) রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (আর অ্যান্ড ডি) সেন্টার।
অনুষ্ঠানে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন ডেল্টা লাইফ সাইন্সকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অনন্য সুযোগ তৈরি করেছে এবং ওষুধ খাতে এই বিনিয়োগের ফলে পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য সৃষ্টি হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ডেল্টা লাইফ সাইন্সেস এখানে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের ওষুধ শিল্পকে বৈশ্বিক মানের প্রতিযোগিতায় নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এ ধরনের বিনিয়োগ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে দেশের সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে যে সেক্টরগুলো থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে বিবেচিত, তাদের মধ্যে অন্যতম হল ফার্মাসিউটিকালস, এ কারণে এখানে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ডেল্টা লাইফ সাইন্স পিএলসি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে উন্নত ওষুধ উৎপাদন এবং গবেষণার আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে আধুনিক উৎপাদন সুবিধা গড়ে তুলে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হবে। তিনি আরো বলেন, এই বিনিয়োগ কার্যক্রম দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি উল্লেখ করেন, ওরাল সলিড মেডিসিন এবং অন্কলোজি মেডিসিন নিয়ে কাজ শুরু করে আগামী ৩ বছরের মধ্যে তার প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বেজাকে সকল সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান।
বেজার নির্বাহী সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) এবং ডেল্টা লাইফ সাইন্সেস পিএলসি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন উভয় পক্ষের পক্ষে লিজচুক্তি স্বাক্ষর করেন।
জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ১৪ টি শিল্প প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং প্রায় ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে। সাগরতীরের ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে গড়ে ওঠা দেশের বৃহত্তম এই পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে শিল্প প্রতিষ্ঠান ছাড়াও নগর ব্যবস্থার সকল সুযোগ সুবিধার সমন্বয় ঘটানো হচ্ছে।