নেপালে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির পদত্যাগের দাবিতে আবারও রাজপথে নেমেছে জেনারেশন জেড (জেন জি)। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ ছাড়াই নতুন মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে তারা বিক্ষোভে নামে।
বিক্ষোভকারীরা রাজধানী কাঠমান্ডুর বালুওয়াটারে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে জড়ো হন। আন্দোলনের অন্যতম নেতা সুদান গুরুংয়ের নেতৃত্বে তারা স্লোগান দিতে থাকেন।
জেন জি নেতাদের অভিযোগ, অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনে তাদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। তারা বলেন, এই সিদ্ধান্ত গণআন্দোলনের আত্মাকে অপমান করে। ফলে সুশীলা কার্কির পদত্যাগই একমাত্র সমাধান।
সুদান গুরুং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমরা যদি আবার রাস্তায় নামি, কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। আমরা যাকে বসিয়েছি, তাকেই সরিয়ে দেবো।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আইনজীবী ওম প্রকাশ আর্যাল গোপনে নিজেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়ে নিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এই প্রক্রিয়াটি ছিল অস্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।
বিক্ষোভে গুরুংয়ের সঙ্গে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরাও অংশ নেন।
এর আগে রোববার প্রধানমন্ত্রী কার্কি ওম প্রকাশ আর্যালকে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। এছাড়া রমেশ্বর খনালকে অর্থমন্ত্রী এবং কুলমান ঘিসিংকে জ্বালানি মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, আর্যাল দুর্নীতি দমন কমিশনে লোকমান সিং কার্কির নিয়োগের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে রিট দায়ের করে পরিচিতি পান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জনস্বার্থে মামলা পরিচালনা করে আসছেন এবং বর্তমানে কাঠমান্ডু সিটির আইনি উপদেষ্টা।
অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী রমেশ্বর খনাল সাবেক অর্থসচিব হিসেবে কাজ করেছেন এবং সম্প্রতি ওলি সরকারের কাছে ৪৪৭ পৃষ্ঠার অর্থনৈতিক সংস্কার রিপোর্ট জমা দেন। কুলমান ঘিসিং বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাবেক এমডি হিসেবে লোডশেডিং কমিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
সূত্র জানায়, কার্কি তিনজনের সঙ্গেই আলাদাভাবে ফোনে কথা বলেন এবং পরে তাদের অফিসে ডেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে তিনি সিনিয়র আইনজীবী সবিতা ভান্ডারীকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেন।
রোববার সকালে কার্কি মন্ত্রিসভা গঠনের আলোচনা শুরু করেন। ধারণা করা হচ্ছে, সর্বোচ্চ ১১ থেকে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভা হবে। এজন্য একজন মন্ত্রীর উপর একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও দেওয়া হতে পারে।
এর আগে, গত ৮ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি, দমন-পীড়ন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে নেপালের তরুণ সমাজ রাস্তায় নামে। নিরাপত্তা বাহিনী জলকামান, টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমাতে চেষ্টা করে। কিছু এলাকায় কারফিউও জারি করা হয়।
তবুও আন্দোলন থামেনি। পরদিনও বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন। ওইদিন বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা এবং অগ্নিসংযোগ হয়। সহিংসতায় এ পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
এই পরিস্থিতিতে, ১২ সেপ্টেম্বর নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। জেন জি আন্দোলনের দাবির প্রেক্ষিতে, প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেল ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে তাকে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়
সূত্র: সেতোপাতি