মধ্যপ্রাচ্যের দখলদার ইসরায়েলের সম্ভাব্য স্থল অভিযানের মোকাবিলায় গাজা সিটিতে অবস্থান গ্রহণে নিজেদের যোদ্ধাদের নির্দেশ দিয়েছেন হামাসের সামরিক শাখার কমান্ডার ইজ আল-দ্বীন হাদাদ। সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আসরাক আল-আওসাত প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। এই প্রেক্ষাপটে হাদাদ তার যোদ্ধাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন এবং জানিয়েছেন, যুদ্ধের সম্মুখভাগে তিনি নিজেও উপস্থিত থাকবেন।
এক আভ্যন্তরীণ বার্তায় হাদাদ বলেন, “গাজা সিটিতে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে যুদ্ধ চলতে পারে।” তিনি যোগ করেন, কেউ নির্দেশনা ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইসরায়েল গত এক মাস ধরে গাজা সিটিতে হামলার হুমকি দিয়ে আসছে। শহরটিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বসবাস করেন। সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজা সিটির বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেন। তিনি এটিকে “শেষ সুযোগ” হিসেবে বর্ণনা করেন এবং দাবি করেন, “গাজা ছেড়ে না গেলে ফল ভুগতে হবে।”
যদিও অধিকাংশ বাসিন্দা এই আহ্বানে সাড়া দেননি। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব, পরিবার-পরিজন ফেলে পালিয়ে যাওয়ার অনিচ্ছা এবং দীর্ঘদিন ধরে চলমান অবরোধের কারণে সাধারণ মানুষ স্থানান্তর করতে পারছেন না।
হামাস ছাড়াও গাজার অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেও গাজা সিটিতে অবস্থান নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আসরাক আল-আওসাত বলছে, কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে “দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা” নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এ দিকে যুদ্ধ থামাতে আবারও কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৯ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তবে ওই সময়ই দোহায় ইসরায়েল একটি বিমান হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে, যা এই আলোচনা ও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
ইতোমধ্যে ইসরায়েল ও হামাস—উভয় পক্ষ থেকে যুদ্ধ থামাতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হলেও বাস্তবতার মাটিতে ফলপ্রসূ কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা সিটির মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থল অভিযান শুরু হলে তা আরও বড় মানবিক বিপর্যয়ের জন্ম দিতে পারে। যুদ্ধের প্রস্তুতি, কূটনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বেসামরিক জনগণের অনড় অবস্থান—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।
সূত্র: জেএনএস, টাইমস অব ইসরায়েল