পূর্ব ইউরোপের দেশ ফ্রান্স আবারও নতুন রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রু জাতীয় পরিষদের অনাস্থা ভোটে পরাজিত হওয়ার পর।
আজ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) এই পরাজয়ের ফলে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বায়রু। প্রেসিডেন্ট কার্যালয় জানিয়েছে, “কয়েক দিনের মধ্যেই” এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ভোটে ৩৬৪ জন সংসদ সদস্য বায়রুর বিপক্ষে এবং মাত্র ১৯৪ জন পক্ষে ভোট দেন। এর ফলে তিনি সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন চালিয়ে যেতে পারবেন না।
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর সামনে এখন কয়েকটি পথ খোলা:
বামপন্থীদের সঙ্গে আপস করে সমাজতান্ত্রিক দলের উপযোগী একজনকে বেছে নেওয়া
অথবা সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচনের ডাক দেওয়া
ফ্রান্স আনবোউড পার্টি (চরম বামপন্থী দল) প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর পদত্যাগ দাবি করেছে। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেটি খুব একটা সম্ভাব্য নয়।
ঋণ ইস্যুতে অনাস্থা ভোট
বায়রু একটি জরুরি আস্থাভোটের ডাক দেন ফ্রান্সের ঋণ সংকট মোকাবিলার পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে। তার মতে, দেশ যদি €৩.৪ ট্রিলিয়নের ঋণ নিয়ন্ত্রণে না আনে, তাহলে সেটা “অস্তিত্ব সংকট” ডেকে আনবে।
বাম ও চরম ডানপন্থীরা একত্রিত হয়ে বায়রুর প্রস্তাব নাকচ করে দেয়, যেহেতু সরকারের সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না।
অনেকে বলছেন, বায়রু রাজনৈতিক আত্মহত্যা করেছেন। আস্থাভোটের কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না; তিনি চাইলে কয়েক মাস সময় নিয়ে সমর্থন তৈরি করতে পারতেন।
ভোটের আগে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ঋণের কাছে আত্মসমর্পণ মানে অস্ত্রের কাছে আত্মসমর্পণের মতোই। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দাসত্বে ঠেলে দেবে। তবে তার এই সতর্কবার্তা জনমত বা সংসদে কোনো প্রভাব ফেলেনি।
জনমত ও সম্ভাব্য আন্দোলন
জরিপে দেখা গেছে, দেশের জনগণ ঋণ নয়, বরং জীবনযাত্রার ব্যয়, নিরাপত্তা ও অভিবাসনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর কয়েকটি বড় শ্রমিক ইউনিয়ন আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এছাড়া, “ব্লোকোঁ তু” (সবকিছু বন্ধ করো) নামে একটি আন্দোলন গোষ্ঠী বুধবার থেকে বিক্ষোভ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা একমত যে, ফ্রান্সের আর্থিক ভবিষ্যৎ বিপদে পড়তে পারে। ২০২০ সালে যেখানে ঋণের সুদ দিতে খরচ হয়েছিল €৩০ বিলিয়ন, তা ২০৩০ সালে গিয়ে €১০০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে।
পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে?
বায়রু গত ডিসেম্বরে মিশেল বার্নিয়ের স্থলাভিষিক্ত হন, যিনি বাজেট পাশ করাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বায়রু সমাজতান্ত্রিকদের সঙ্গে একটি ‘নন-অ্যাগ্রেশন প্যাক্ট’-এর মাধ্যমে বাজেট পাশ করেছিলেন, কিন্তু সর্বশেষ পেনশন সংস্কার নিয়ে দ্বন্দ্বে সম্পর্ক ভেঙে পড়ে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, ম্যাক্রো কি এবার বামপন্থী কাউকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন? তবে সমাজতান্ত্রিক পার্টি জানিয়েছে, তারা ম্যাক্রোর ব্যবসাবান্ধব নীতির সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে এবং পেনশন সংস্কারেরও পূর্ণ প্রত্যাহার চায়—যা মূলত প্রেসিডেন্টের নীতির পূর্ণবিরোধী।
এই প্রেক্ষাপটে ধারণা করা হচ্ছে, ম্যাক্রো আবার তার নিজের রাজনৈতিক শিবির থেকে কাউকে প্রধানমন্ত্রী করবেন। সম্ভাব্য নামগুলোর মধ্যে রয়েছেন:
প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়াঁ লেকর্নু
শ্রমমন্ত্রী ক্যাথেরিন ভত্রাঁ
অর্থমন্ত্রী এরিক লম্বার্ড
সূত্র: বিবিসি