যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক দিবসে কেউ গ্রীষ্মের ছুটিতে সময় কাটিয়েছেন, কেউ আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত ছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে নানা গুজব ছড়াতে। বলা হচ্ছিল, ট্রাম্প মারা গেছেন, স্ট্রোক করেছেন কিংবা তিনি গুরুতর অসুস্থ।
গত সোমবার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ #TrumpIsDead ও #WhereIsTrump হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডে ছিল। টিকটকে হাজারো ভিডিও ছড়ায়, যেখানে দাবি করা হয় ট্রাম্প মৃত্যুশয্যায়।
এটা একদম পাগলামি: ট্রাম্প
বাস্তবে, ট্রাম্প মারা যাননি। বরং মঙ্গলবার তিনি হোয়াইট হাউসে জনসমক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন এবং গণমাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন। ট্রুথ সোশ্যালে তার পোস্টে হাজারো মন্তব্য দেখা গেছে। ফক্স নিউজের সাংবাদিক পিটার ডুসি ট্রাম্পকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি নাকি মারা গেছেন?” ট্রাম্প জবাব দেন, “আমি কিছুই দেখিনি, তবে শুনেছি। এটা একরকম পাগলামি।”
গুজব ছড়ানোর পেছনে কারণ কী?
ট্রাম্পের সত্যিই কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তবে তা গুরুতর নয়। তারপরও তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে কয়েকটি কারণে:
– ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের একটি মন্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা
– সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের অতিরঞ্জন
ভ্যান্সের ‘ব্যাখ্যা’ থেকে বিভ্রান্তি
২৮ আগস্ট ইউএসএ টুডে-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভ্যান্স বলেন, “ট্রাম্প সুস্থ আছেন এবং মেয়াদ পূর্ণ করবেন। তবে যদি কিছু হয়, আমি প্রস্তুত।” তার এই মন্তব্য অনেকে ব্যাখ্যা করেন ট্রাম্পের মৃত্যু বা অসুস্থতার ইঙ্গিত হিসেবে।
ছয়দিন জনসম্মুখে না দেখা দেওয়ার প্রভাব
২৬ আগস্ট ট্রাম্পের একটি বৈঠক টিভিতে সম্প্রচার হয়। এরপর টানা ছয়দিন তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এতে গুজব আরও জোরদার হয়। অল-মনিটরের সাংবাদিক লরা রোজেন ২৯ আগস্ট লেখেন, “পুরো সপ্তাহে ট্রাম্পের কোনো কর্মসূচি নেই। আজও তাকে দেখা যায়নি।”
একইদিন, ট্রাম্পের ফোলা গোড়ালি ও হাতে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায় এমন কিছু ছবি ভাইরাল হয়। একজন টিকটক ব্যবহারকারী নিজেকে “ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট” দাবি করে বলেন, “ট্রাম্প স্ট্রোক করেছেন। হোয়াইট হাউস তা গোপন করছে।” ভিডিওটি ৩ মিলিয়নের বেশি ভিউ হওয়ার পর মুছে ফেলা হয়।
বিশ্লেষকরা যা বলছেন
সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম অধ্যাপক জেফ্রি ব্লেভিন্স মনে করেন, “ভ্যান্সের মন্তব্য, ট্রাম্পের শারীরিক লক্ষণ, ও তার কয়েকদিন অনুপস্থিতি—সব মিলে গুজবের আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে।”
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লিফ ল্যাম্পে বলেন, ট্রাম্পই প্রথম নন। স্ট্যালিন, কিম জং উন বা পুতিনের ক্ষেত্রেও এমন গুজব ছড়িয়েছে।
উদারপন্থী বিশ্লেষক ও ইনফ্লুয়েন্সারদের ভূমিকা
উদারপন্থী কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের স্বাস্থ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং হোয়াইট হাউসের কাছে ব্যাখ্যা চান। তাদের ভিডিওগুলো মিলিয়ন ভিউ ছাড়ায়।
তবে অনেকে আবার গুজব উড়িয়ে দিয়ে জানান, ট্রাম্প সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে কাজ করছেন। ইনফ্লুয়েন্সার অ্যারন পারনাস বলেন, “গুজব ভিত্তিহীন, তবে ট্রাম্পের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।”
অধ্যাপক ল্যাম্পে যোগ করেন, “যে নেতাকে কেউ পছন্দ করে না, তাকে নিয়ে গুজব ছড়ানো মনস্তাত্ত্বিক চাপ কমানোর এক উপায় হয়ে ওঠে।”
সূত্র: আল জাজিরা