কেরালার স্বাস্থ্য বিভাগ এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। সেখানে ‘নেগেলেরিয়া ফাউলেরি’ নামক এক ক্ষুদ্রজীবের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা সাধারণত ‘ব্রেন-ইটিং অ্যামিবা’ বা ‘মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা’ নামে পরিচিত। এই অ্যামিবা ‘প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনজোএনসেফালাইটিস’ (PAM) নামক এক প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি করে।
২০২৫ সালে কেরালায় এ পর্যন্ত ৪২ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত আগস্ট মাসেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে তিন মাস বয়সী এক শিশু এবং ৫২ বছর বয়সী এক নারীও রয়েছেন। কোঝিকোডের ৯ বছরের এক শিশু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়।
এই সংক্রমণের ফলে মৃত্যুহার প্রায় শতভাগ এবং রোগটি অত্যন্ত দ্রুত ছড়ায়। সংক্রমণের ১ থেকে ১২ দিনের মধ্যে এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া এবং আলোতে সংবেদনশীলতা। পরবর্তী ধাপে বিভ্রান্তি, হ্যালুসিনেশন, খিঁচুনি, ভারসাম্যহীনতা, এবং কোমা দেখা দেয়, যা সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যেই মৃত্যুর কারণ হয়।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেরালা সরকার দ্রুত ‘ওয়াটার ইজ লাইফ’ নামে একটি ক্লোরিনেশন অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানের মাধ্যমে কূপ, পানির ট্যাংক এবং জনসাধারণের স্নানের স্থানগুলোতে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে, জনগণকে সচেতন করতে ও বর্ষাকালে নিরাপদ পানি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘নেগেলেরিয়া ফাউলেরি’ হলো উষ্ণ পানির একটি অণুজীব। এটি সাধারণত অপরিশোধিত কূপ, পুকুর, হ্রদ, নদী এবং ক্লোরিন-বিহীন সুইমিংপুলে জন্মায়। নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করার পর এটি দ্রুত মস্তিষ্কে পৌঁছায় এবং রোগ সৃষ্টি করে। তাই, অপরিশোধিত বা নোংরা পানিতে গোসল বা সাঁতার এড়িয়ে চলা জরুরি।