দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে উদ্বোধন হলো গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষের স্বপ্নের ‘মওলানা ভাসানী সেতু’। বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুর পৌনে ১টার দিকে ফলক উন্মোচন করে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটির উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া
এর আগে, আসিফ মাহমুদ রংপুর থেকে সড়ক পথে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহর হয়ে সেতুস্থলে পৌঁছান। পরে সেতুর উত্তর পাশে ফলক উন্মোচন করে সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উদ্বোধনের পর গাড়ি বহরে সেতুর দুই প্রান্ত ঘুরে দেখেন তিনি।
পরে সেতু ঘুরে গোলচত্বর এলাকায় এক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন আসিফ মাহমুদ। এই মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ অংশ নেয়।
এদিকে, উদ্বোধনের আগেই সেতু দেখতে ভিড় করেন গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের হাজারো মানুষ। নানা বয়সী মানুষের ঢল নামে সেতু এলাকায়। শিশু, তরুণ, বৃদ্ধ—সবাই যেন নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হতে সেতু এলাকায় ভিড় জমান। সেতুর দুই প্রান্তে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। সেতুতে মানুষের ভিড় সামলাতে হিশশিম খায় পুলিশ ও সেনাবাহীনির সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
দীর্ঘ এই সেতুটি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত বিস্তৃত। দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৯০ মিটার, প্রস্থ ৯.৬০ মিটার, লেন সংখ্যা ২টি এবং মোট স্প্যান সংখ্যা ৩১টি। এটি বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় সেতু।
চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন এলজিইডির তত্ত্বাবধানে সেতুটি নির্মাণ করেছে। সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি)-এর অর্থায়নে নির্মিত এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা।
এর আওতায় ৮৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক, সাড়ে ৩ কিলোমিটার নদী শাসন এবং প্রায় ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই সেতুটি চালু হওয়ায় গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। শিল্প ও কৃষিজাত পণ্য পরিবহন হবে দ্রুত ও সহজতর। একইসঙ্গে ছোট ও মাঝারি শিল্পকারখানা স্থাপনের সুযোগও বৃদ্ধি পাবে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সেতুটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো। স্থানীয়রা মনে করছেন, এ সেতু শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থায় নয়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতি আনবে। গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম তথা উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নে মাইলফলক হয়ে থাকবে।