ফিফার র্যাংকিংয়ে ২১১টি দেশের নাম রয়েছে, যেখানে অধিকাংশই স্বাধীন রাষ্ট্র এবং কিছু পরাধীন ভূখণ্ড। তবে এক দেশ আজও ছিল এই তালিকায় অনুপস্থিত, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ। কারণ, স্বাধীন হওয়ার পরও তারা কখনোই আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলেনি। তবে সেই অপেক্ষার দিন শেষ, এবার মার্শাল দ্বীপপুঞ্জও আন্তর্জাতিক ফুটবলের মঞ্চে অভিষেক ঘটালো।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ‘পৃথিবীর শেষ দেশ’ হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের আন্তর্জাতিক ফুটবল অভিষেক ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের স্প্রিংডেল হাইস্কুল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে মার্কিন ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের কাছে ৪-০ গোলে পরাজিত হয় মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ। তবে এই পরাজয় তাদের কাছে মুখ্য বিষয় ছিল না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন (এমআইএসএফ) তাদের অর্জনের জন্য গর্বিত হওয়ার কথা জানিয়ে পোস্ট করেছে,‘স্কোর যাই হোক না কেন, আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছি।’
প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের জনসংখ্যা মাত্র ৪২ হাজার। যদিও দেশটি এখনও ফিফা এবং ওশেনিয়া ফুটবল কনফেডারেশনের (ওএফসি) সদস্য হয়নি তবুও এমআইএসএফ এখন জাতীয় অলিম্পিক কমিটির সদস্যপদ পাওয়ার জন্য কাজ করছে। বর্তমানে তারা জাতীয় ফুটবল দল, জাতীয় ফুটসাল দল ও জাতীয় নারী দল পরিচালনা করছে।
মাত্র পাঁচ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ফেডারেশনটি সম্প্রতি দেশটির ফুটবল দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ারের বাসিন্দা ও সাবেক আধা-পেশাদার ফুটবলার লয়েড ওয়ার্স, যিনি মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ ফুটবল দলের প্রযুক্তিগত পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন তিনিই দেশের প্রতিভাবান ফুটবলারদের খুঁজে বের করে টিম গঠন করতে শুরু করেছেন।
এমআইএসএফের উদ্যোগে আয়োজিত ‘আউটরিগার চ্যালেঞ্জ কাপ’ নামে একটি নতুন ফুটবল টুর্নামেন্টে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ ও মার্কিন ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ ছাড়াও অংশগ্রহণ করছে টার্কস ও কাইকোস দ্বীপপুঞ্জ এবং স্থানীয় ওজার্ক ইউনাইটেড অনূর্ধ্ব-১৯ দল। এই টুর্নামেন্টের সব ম্যাচ হবে স্প্রিংডেল হাইস্কুল স্টেডিয়ামে যা যুক্তরাষ্ট্রের মার্শালিজ সম্প্রদায়ের প্রধান বসবাসস্থল।
দলের খেলোয়াড়রা অভিষেক ম্যাচের আগে মাত্র পাঁচবার একত্রিত হয়ে অনুশীলন করেছেন। ছোট্ট দ্বীপদেশে পূর্ণাঙ্গ ফুটবল মাঠের অভাব থাকায় অনেক সময় বাস্কেটবল কোর্টে ফুটবল খেলা হয়। এই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ খেলোয়াড়ের বয়স ১৫ বছর, আর সবচেয়ে প্রবীণ খেলোয়াড়ের বয়স ৪০ বছর।
ফিফার সদস্যপদ পেলে, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ ফুটবল ফেডারেশনকে ব্যাপক আর্থিক সহায়তা পাবেন, যা দিয়ে দেশের ফুটবলের অবকাঠামো উন্নয়ন সম্ভব হবে। তবে প্রথমে একটি মহাদেশীয় ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থার সদস্য হতে হবে যা এখনও ঘটেনি। এমআইএসএফ বর্তমানে কনকাকাফ (উত্তর, মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা) বা এএফসির (এশিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা) সদস্য হওয়ার কথা ভাবছে।
মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের সহকারী কোচ জাস্টিন ওয়ালি দ্য টাইমসকে বলেন,‘আমরা চাই এখানকার ফুটবল জনপ্রিয় হোক, বাচ্চারা খেলুক, তাদের জন্য রোল মডেল তৈরি হোক এবং একদিন আমরা ফিফার অংশ হই।’ তার মতে, এই অভিষেক মুহূর্তটি তার জন্য সন্তানের জন্মের মতো বিশেষ ও স্মরণীয়।
মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ টুর্নামেন্টে তাদের পরবর্তী ম্যাচ খেলবে টার্কস ও কাইকোস দ্বীপপুঞ্জের বিরুদ্ধে। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বের ২৫০০ মাইল দূরে অবস্থিত এবং ২৯টি প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত। দেশটি ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতা লাভ করে, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় দেশটির টিকে থাকা এখন হুমকির মুখে।