spot_img

অসুস্থতার সময় মনোবল ধরে রাখার উপায়

অবশ্যই পরুন

রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি ও তা নিরাময়ে রোগীর মানসিক শক্তির বিশেষ ভূমিকা আছে। কোনো অসুস্থ ব্যক্তি যখন মনোবল হারিয়ে ফেলে তখন শারীরিক জটিলতাও বাড়তে থাকে। এ জন্য চিকিৎসকরা রোগীর মনোবল ঠিক রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

অসুস্থ ব্যক্তির মনোবল ধরে রাখতে সহায়ক কয়েকটি কাজ—

১. হতাশ না হওয়া : হতাশা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন মুমিন কখনো আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের ব্যাপারে হতাশ হয় না। সে আশা করে আল্লাহ সবকিছু ঠিক করে দেবেন। আল্লাহ বলেন, ‘বোলো, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ—আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ৫৩)

২. আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ : মুমিন আল্লাহর প্রতি এই ধারণা পোষণ করবে যে তিনি আমাকে সুস্থতা দান করবেন। কেননা আল্লাহ বান্দার সঙ্গে তার ধারণা মোতাবেক আচরণ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দার প্রতি অনুরূপ যেমন সে ধারণা করে। আমি তার সঙ্গেই থাকি সে যখন আমাকে স্মরণ করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৭৫)

৩. প্রত্যেক রোগের আরোগ্য আছে : আল্লাহ প্রত্যেক রোগের আরোগ্য রেখেছেন। তাই মুমিন বিশ্বাস করবে তার রোগ যত জটিলই হোক না কেন আল্লাহ অবশ্যই তা থেকে মুক্তির উপায় রেখেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি যার চিকিৎসা তিনি রাখেননি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৭৮)

৪. আল্লাহ আমার কল্যাণ চান : অনেকেই রোগ-ব্যাধিকে অভিশাপ মনে করে। কিন্তু মুমিনের জন্য রোগ-ব্যাধি অভিশাপ নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। আল্লাহ এর মাধ্যমে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করতে চান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে দুঃখে-কষ্টে ফেলেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৪৫)

৫. আল্লাহ প্রতিদান রেখেছেন : রোগ-ব্যাধির মাধ্যমে আল্লাহ মুমিন বান্দার পাপ মার্জনা করেন। আর মুমিন যদি তাতে ধৈর্য ধারণ করে, তবে তাকে উত্তম প্রতিদান দেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৪২)

৬. তাকদির অনিবার্য : মুমিন তাকদিরের ভালো-মন্দে বিশ্বাস করে। আল্লাহ তার জন্য যা লিখে রেখেছেন তাই হবে। ফলে সে অহেতুক দুশ্চিন্তা না করে আল্লাহর নিজেকে আল্লাহর দরবারে সমর্পণ করে। কোরআনের ভাষায়—‘আমি আমার বিষয়টি আল্লাহর হাতে সমর্পণ করলাম। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দাদের প্রত্যক্ষ করেন।’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ৪৪)

৭. দোয়া ও জিকির করা : জিকিরের মাধ্যমে মানসিক অস্থিরতা দূর হয় এবং অন্তরে প্রশান্তি আসে। ফলে রোগীর মনোবল বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান আনে, আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই শুধু হুদয় প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২৮)

৮. আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করা : অসুস্থ ব্যক্তি যদি চিন্তা করলে দেখবে, তার প্রতি আল্লাহর অসীম দয়া ও অনুগ্রহ রয়েছে, তার চেয়েও আরও গুরুতর অসুস্থ মানুষ পৃথিবীতে আছে, বহু মানুষের অবস্থা তার চেয়ে আরও অনেক বেশি করুণ। মুমিন বান্দা যখন নিজের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ কল্পনা করবে, তখন তার মানসিক অস্থিরতা, হতাশা ও দুশ্চিন্তা দূর হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করো, তবে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১৮)

৯. চিকিৎসা গ্রহণ : রোগ-ব্যাধি হলে মুমিন তাকদিরের ওপর ভরসা করে বসে থাকবে না, বরং উত্তম চিকিৎসা গ্রহণ করবে। উসামা ইবনে শরিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মফস্বলের একদল লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি (রোগীর) চিকিৎসা করব না? তিনি বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা চিকিৎসা করো। কেননা আল্লাহ তাআলা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার ওষুধ বা নিরাময়ের ব্যবস্থা রাখেননি। কিন্তু একটি রোগের কোনো নিরাময় নেই। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেই রোগটি কী? তিনি বলেন, বার্ধক্য।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩৮)

আল্লাহ সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ সংবাদ

স্বৈরতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা: দুদু

নির্বাচন নিয়ে যারা টালবাহানা করছে তারা স্বৈরতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। বৃহস্পতিবার (১৪...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ