মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশকে বিতর্কিত ‘আব্রাহাম চুক্তি’ মেনে নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এখন, যেহেতু ইরানের ‘তৈরিকৃত’ পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, তাই আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ আব্রাহাম অ্যাকর্ডস-এ যোগদান করবে।’
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সই এই ‘আব্রাহাম চুক্তি’র আওতায় চারটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরক্কো ও সুদান- ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করে। তবে সৌদি আরবসহ আরও কয়েকটি আরব দেশ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আগে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় জরুরি। খবর আলজাজিরার।
আব্রাহাম চুক্তি বা অ্যাকর্ডস একটি ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি বা কূটনৈতিক স্বীকৃতির চুক্তি, যার মাধ্যমে কয়েকটি আরব ও মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
চুক্তিটির নাম রাখা হয়েছে ‘আব্রাহাম’-যিনি ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমানদের কাছে সম্মানিত আদি পিতা বা সর্বপ্রথম নবী। এই নামের মাধ্যমে তিন ধর্মের ঐতিহ্যিক মিলের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে শত্রুতা ও অস্বীকৃতির দীর্ঘ ইতিহাসকে পেছনে ফেলে নতুনভাবে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তাগত সহযোগিতা শুরু করা এবং ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও হুমকির বিরুদ্ধে একটি আঞ্চলিক ঐক্য গড়ে তোলা।
প্রাথমিক সইকারী দেশগুলো হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন। ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে এই দুই দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা দেয়। সুদান ও মরক্কো পরবর্তীতে ২০২০ সালের শেষ দিকে চুক্তিতে যোগ দেয়।ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তিগুলোর মধ্যস্থতাকারী ছিল। ট্রাম্প এটিকে তার সরকারের একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে প্রচার করেন।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ও জনগণ এই চুক্তিগুলোর তীব্র বিরোধিতা করে।তারা মনে করে, এই স্বীকৃতিগুলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে খর্ব করে এবং ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে বৈধতা দেয়। সৌদি আরবকে চুক্তিতে যুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চলছে, কিন্তু তারা এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়নি।
ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য, পর্যটন, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা বাড়ছে।চুক্তিটি মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত মানচিত্রে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। মূলত আব্রাহাম চুক্তি হলো ইসরায়েল ও নির্দিষ্ট আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ, যার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং ভূরাজনৈতিক স্বার্থ।