পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, গত এক বছরে বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবমুখী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছে, যেখানে জাতীয় স্বার্থ ও পারস্পরিকতা অগ্রাধিকার পেয়েছে এবং একই সঙ্গে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রধান শক্তিগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক রক্ষা করা হয়েছে। বাসসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে আমরা বিশ্বাস করি, গত এক বছরে আমরা বাংলাদেশের স্বার্থকে সামনে রেখে সব দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছি, আমরা কতটা সফল হয়েছি তা জনগণ এবং সিভিল সোসাইটি মূল্যায়ন করবে।’
উপদেষ্টা বলেন, এই ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি গত এক বছরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সফলতার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল এবং অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিক কৌশলে এটাই চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।
তৌহিদ বলেন, বর্তমান প্রশাসন ‘বাংলাদেশ-কেন্দ্রিক’ একটি কৌশল নিচ্ছে যা ‘আলোকিত স্বার্থবোধ’-এর ভিত্তিতে গঠিত। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা ভারতকে কিছু দিই, তাহলে আমি আশা করব আমরা ভারতের কাছ থেকেও সমপরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি কিছু পেতে পারব- এটি কেবল ভারতের ক্ষেত্রেই নয়, সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কূটনীতিতে ভূমিকা তুলে ধরে তৌহিদ বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা ‘এই সরকারের একটি সম্পদ’।
তিনি বলেন, প্রফেসর ইউনূসের সুনাম অনেক সময় দরজা খুলে দেয় এবং এমন ফলাফল বয়ে আনে যা সাধারণ কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় অর্জন করা কঠিন হতো।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি ফোন কলের মাধ্যমে প্রফেসর ইউনূস সংযুক্ত আরব আমিরাতে বন্দী অনেক বাংলাদেশির সাধারণ ক্ষমা নিশ্চিত করতে সহায়তা করেন- এটি ইউনূস স্যারের অনুরোধেই সম্ভব হয়েছে। আমি এটাকে আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করি, এবং আমরা এটি ব্যবহার করছি।’
‘তার প্রতি যে সম্মান রয়েছে তা কেবল রাজনৈতিক পরিসরে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা সরকার, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্ম জুড়ে বিস্তৃত,’ যোগ করেন তৌহিদ। তিনি বলেন, এই ধরনের ‘সফট পাওয়ার’ কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক
‘তৌহিদ বলেন, আগের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখলেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী কর্মসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে, যদিও কিছু জটিলতা এখনো রয়ে গেছে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সাম্প্রতিক কিছু চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে, যেমন বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা ও স্থলবন্দর সংক্রান্ত অমীমাংসিত বিষয়, তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য এখনো চলমান রয়েছে।
তবে তিনি উল্লেখ করেন, দুইটি নির্দিষ্ট প্রবণতায় লক্ষণীয় হ্রাস দেখা গেছে, ভারতের দিকে ক্রস-বর্ডার কেনাকাটায় যাওয়া এবং চিকিৎসা ও পর্যটনের জন্য ভ্রমণ।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এটা বাংলাদেশ জন্য ক্ষতি হিসেবে দেখি না।’ তিনি মনে করেন এই ভোক্তা ভ্রমণ হ্রাসের অর্থনৈতিক প্রভাব কম।
চিকিৎসা পর্যটন সম্পর্কে তিনি বলেন, আগের মতো মানুষ এখন আর ছোটখাটো চিকিৎসার জন্য ভারত যাচ্ছে না, বরং চীন ও থাইল্যান্ডের মতো দেশে যাচ্ছে, বিশেষত যেসব সেবা এখনো বাংলাদেশে নেই।
‘আগে অনেক মানুষ ছোটখাটো চিকিৎসার জন্যও ভারতে যেত, যা আসলে অপ্রয়োজনীয় ছিল’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসার জন্য ভারত ভ্রমণ কমে যাওয়ায় দেশের বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর রোগীর সংখ্যা বেড়েছে, যা দেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সীমান্তে হত্যা ও পুশ-ইন বিষয়ে জোরালো প্রতিবাদ
হোসেন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর হাতে মানুষ হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ এরইমধ্যে আরও জোরালো ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং এসব ঘটনার বিরুদ্ধে স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন নিন্দা জানিয়েছে।
তিনি জানান, গত এক বছরে বর্তমান সরকার আগের সরকারের তুলনায় ভারতকে আরও কঠোর ভাষায় প্রতিবাদপত্র দিয়েছে, যা কূটনৈতিক অবস্থানের ক্ষেত্রে আরও দৃঢ়তা প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, সরকার ভারতকে অনুরোধ করেছে যেন এ ধরনের ‘নৃশংস কর্মকাণ্ড’ আর যেন না ঘটে, এবং প্রতিটি সীমান্ত হত্যার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছে। বাংলাদেশ বলেছে, যারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী, তাদের শনাক্ত করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বের আর কোথাও সীমান্তে মানুষকে মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করে গুলি করে হত্যা করা হয় না। ভারত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাত দেয়, কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বারবার ভারতকে বলে আসছি, এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবে।
তৌহিদ সীমান্তে অনিয়মিতভাবে ‘পুশ-ইন’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যেখানে শুধু বাংলাদেশি নয়, ভারতীয় বাংলা ভাষাভাষী নাগরিকদেরও ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এতে প্রমাণ হয় যে এই পদ্ধতি সঠিক নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা ভারতকে বলেছি, মানুষ ফেরত পাঠানোর জন্য একটি নির্ধারিত প্রক্রিয়া রয়েছে। আমরা সেই প্রক্রিয়া মেনেই লোক ফেরত পাঠিয়ে আসছি। আমাদের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালনে ঘাটতি নেই। কিন্তু এই ধরনের অনিয়মিত পুশ-ইন গ্রহণযোগ্য নয়, এবং আমরা চাই এটি বন্ধ হোক। আমরা এ বিষয়েও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা
গত এক বছরে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে। এই প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে কূটনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ, এমনকি পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বাতিলও।
তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে পাকিস্তানের প্রতি কোনো ধরনের নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত নেই। সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগ কেবল কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে নেওয়া, যাতে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে।
তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলেন, আমরা নাকি পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছি কিন্তু আমরা আদৌ কোনো ঝুঁক নিচ্ছি না; আমরা যা করছি তা হলো পাকিস্তানের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, যাতে আমাদের স্বার্থ রক্ষা পায়।’
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের কূটনৈতিক উদ্যোগ হলো সামগ্রিকভাবে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি রক্ষার অংশ।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, গত সরকার আমলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা’ হয়েছিল, যা ছিল অপ্রয়োজনীয়।
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের দীর্ঘস্থায়িত্ব ও ধারাবাহিকতা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব স্থিতিশীলই থেকেছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক সরকার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কখনো খারাপ হয়নি।’ তিনি ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যকার এই সম্পর্কের গভীর ভিত্তি তুলে ধরেন।
কিছু মহলে বাংলাদেশ ‘চীনের খুব কাছাকাছি’ চলে যাচ্ছে বলে যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়, উপদেষ্টা তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে ঢাকার সম্পৃক্ততা জাতীয় স্বার্থে প্রোথিত।
তিনি বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আমাদের নিজেদের স্বার্থে আর অবশ্যই চীনেরও স্বার্থ রয়েছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, দুই দেশের সহযোগিতা একতরফা নয়; বরং এটি পারস্পরিক লাভ এবং অভিন্ন অগ্রাধিকারভিত্তিক।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিচ্ছি।’ তিনি বোঝাতে চান, বাংলাদেশের চীনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কের খরচে হচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক
তৌহিদ হোসেন পুনর্ব্যক্ত করেন যে, বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণের মধ্যেও বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলেছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো বাংলাদেশের চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর না করাকে পছন্দ করলেও ঢাকা নিজের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার দিকেই বেশি মনোযোগী, কোনো নির্দিষ্ট বলয়ের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে আগ্রহী নয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা আসলে চীনের দিকে ঝুঁকছি না; আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষা করছি এবং একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক রয়েছে।’
তৌহিদ স্বীকার করেন যে, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমানভাবে দ্বি-মেরুভিত্তিক হয়ে উঠেছে, তবে তিনি যুক্তি দেন যে, বলয়ের সীমানা সবসময় এতটা কঠোর বা পরিষ্কার নয়।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব পরিস্থিতি দ্বিমেরু এই বলয় ও সেই বলয় কিন্তু এটি নিখুঁত নয়।’
তিনি দেখান, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিচ্ছে, যদিও তাদের ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে এবং একইসঙ্গে চীনের ইসলামাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও রয়েছে।
এই জটিলতাই, তার মতে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য বাস্তববাদী এবং স্বার্থভিত্তিক পররাষ্ট্র সম্পৃক্ততা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় ১৫ শতাংশ শুল্ক হ্রাসে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
তৌহিদ হোসেন স্বীকার করেন, গত আট বছর ধরে বাংলাদেশ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ১০ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিলেও অর্থবহ প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা এখনও দূরবর্তী।
তবে তিনি সম্প্রতি বিমসটেক সম্মেলনে মিয়ানমারের একটি অগ্রগতি উল্লেখ করেন, যেখানে দেশটি তাদের কিছু নাগরিককে যাচাই করার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
তিনি বলেন, ‘এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। তবে আমরা আশাবাদী। যদিও রাখাইন রাজ্যে শান্তি ফিরে না এলে প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। আমরা আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করি, কাউকে জোর করে ফেরত পাঠানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
কূটনৈতিক মিশন সম্প্রসারণ
গত এক বছরে ঢাকা তার বৈশ্বিক কূটনৈতিক উপস্থিতি বৃদ্ধির চেষ্টা করেছে, যার অংশ হিসেবে নিউজিল্যান্ডে একটি নতুন হাইকমিশন এবং মালয়েশিয়ার জহর বাহরুতে একটি কনস্যুলেট খোলার প্রস্তুতি চলছে।
হোসেন বলেন, ‘আমরা নিউজিল্যান্ড ও জহর বাহরুতে তিন মাসের মধ্যে মিশন খুলতে পারব, কারণ আমরা এর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছি।’
তিনি জানান, মালয়েশিয়ায় অভিবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তায় পেনাং-এ আরেকটি কনস্যুলেট খোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।
এছাড়া, আরও ছয়টি দূতাবাস ও কনস্যুলেটের অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততা জোরদার এবং প্রবাসীদের কনস্যুলার সেবা নিশ্চিত করার সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।
সবচেয়ে জরুরি প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনের গুয়াংজুতে একটি কনস্যুলেট এবং আয়ারল্যান্ডে একটি পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস।
তৌহিদ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব অর্থ উপদেষ্টাকে এসব জরুরি মিশনের অনুমোদনের জন্য রাজি করাতে।’ তিনি আরও বলেন, বাকি মিশনগুলো আগামী এক বছরে পর্যায়ক্রমে চালু করা হতে পারে, বাজেট অনুমোদনের ওপর নির্ভর করে।
প্রবাসী কল্যাণে সংস্কার
হোসেন বলেন, মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্ভোগ লাঘব করা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারগুলোর একটি।
তিনি পাসপোর্ট ইস্যু সংক্রান্ত সেবা উন্নয়নের জন্য নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। উদাহরণস্বরূপ, ওমানের ক্ষেত্রে, এখন ই-পাসপোর্ট সরাসরি আবেদনকারীর বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে ওমান পোস্টের মাধ্যমে, ফলে দ্বিতীয়বার ব্যক্তিগতভাবে যেতে হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই প্রবাসীরা যেন কাজের সময় হারিয়ে না ফেলে। আমরা মিশনগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি যেন তারা সেবা প্রত্যাশীদের জন্য ছায়াযুক্ত অপেক্ষাকক্ষ তৈরি করে—জেদ্দায় এটি ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে।’
হোসেন আরও বলেন, অভিবাসন খরচ অত্যধিক হওয়ার পিছনে অবৈধ কার্যক্রম এবং শোষণও অন্যতম কারণ।
এই সমস্যাগুলোর সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তাব করেছে, মধ্যপ্রাচ্যের ব্যস্ততম মিশনগুলোতে অতিরিক্ত একজন করে প্রবাসী কল্যাণ কর্মকর্তা এবং পাসপোর্ট কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হোক, যাতে বড় প্রবাসী জনগোষ্ঠীকে আরও ভালোভাবে সেবা দেওয়া যায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সংস্কার
তৌহিদ বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ে কাউকেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছি না। গত এক বছরে এভাবে একজনকেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, প্রায় ৭০টি মিশন পরিচালনায় শুধু ৪০০ জন ক্যাডারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যাদের এক-তৃতীয়াংশই সদর দপ্তরে কর্মরত।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে কোনো পোস্ট ফাঁকা রাখা হবে না। প্রয়োজনে ইউরোপে কিছু পোস্ট ফাঁকা রাখব।’
তৌহিদ উপসংহারে বলেন, সরকার এমন কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা সমস্ত দেশের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গঠনমূলক, ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত, এবং যা বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করবে।
সমমনাদের নিয়ে জোট হতে পারে
নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে নিরপেক্ষভাবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে এটা গঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের আইন, বিধি নীতিমালা আছে। আরও কিছু নিয়ম আছে, টোটল ১৭ টা। নির্বাচন কমিশন ২৪১টি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন। আমাদের দলের পক্ষ থেকে আরও দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো আইনের খুঁটিনাটি পরিবর্তন। এগুলোর অনেক কিছু নির্বাচনের আগেও সংশোধিত হয়ে যেতে পারে। হচ্ছেও তাই। নির্বাচন পরিচালনার জন্য যেসব আইন কানুন পরিবর্তন করা দরকার সেগুলো হচ্ছে।