গাজায় সামরিকভাবে ব্যবহার হতে পারে এমন কোনো অস্ত্র রপ্তানিতে নিজেদের অবস্থান আরও একবার সুস্পষ্ট করেছে কানাডা। শনিবার (২ আগস্ট) দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিতা আনন্দ এক বিবৃতিতে জানান, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ব্যবহারের ঝুঁকি থাকতে পারে—এমন কোনো সামরিক পণ্যের জন্য নতুন কোনো রপ্তানি অনুমতি দেওয়া হয়নি। বরং এ সংক্রান্ত পুরনো অনুমতিগুলোও স্থগিত করা হয়েছে।
‘কানাডা একটি কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। ২০২৪ সালে আমরা এমন সব অনুমতিপত্র বাতিল করেছি যেগুলোর মাধ্যমে গাজায় ব্যবহার হতে পারে এমন সব সামরিক উপাদান পাঠানো সম্ভব হতো। এসব অনুমতি এখনো স্থগিত রয়েছে,’ বলেন আনিতা আনন্দ।
তিনি বলেন, দেশটির আইন অনুযায়ী অনুমতিপত্র ছাড়া কেউ সামরিক পণ্য রপ্তানি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে মোটা অঙ্কের জরিমানা, পণ্য জব্দ এবং ফৌজদারি অভিযোগ।
আনন্দ আরও বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই গাজা সংকটে কানাডার তৈরি অস্ত্রের সম্পৃক্ততা মেনে নেব না।’
এ বিবৃতি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ২৯ জুলাই চারটি বেসরকারি সংস্থা—বিশ্ব যুদ্ধবিরোধী সংগঠন ওয়ার্ল্ড বিয়ন্ড ওয়ার, প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্ট, কানাডিয়ানস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস ইন দ্য মিডল ইস্ট এবং ইন্ডিপেনডেন্ট জিউইশ ভয়েসেস—এক যৌথ প্রতিবেদনে দাবি করে, কানাডা থেকে এখনো অস্ত্র যাচ্ছে ইসরায়েলে।
ওই প্রতিবেদনে ইসরায়েলি ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের তথ্যসূত্র দেখিয়ে বলা হয়, কানাডা থেকে ‘সামরিক অস্ত্রের অংশ’ ও ‘গোলাবারুদ’ চিহ্নিত পণ্য ইসরায়েলে প্রবেশ করছে।
তবে এসব দাবিকে ‘ভুল ও বিভ্রান্তিকর’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে আনন্দ বলেন, ‘যেসব সামগ্রীকে ‘‘গুলির খোসা’’ বলা হয়েছে, তা আদতে পেইন্টবল জাতীয় প্রজেকটাইল এবং এমন যন্ত্রাংশ, যেগুলো একটি আগ্নেয়াস্ত্রকে প্রচলিত গুলির জন্য অকার্যকর করে তোলে। এগুলো কোনোভাবেই যুদ্ধে ব্যবহারের উপযোগী নয়। আর ব্যবহার করতে গেলেও এর জন্য অনুমতি দরকার হবে—যা আমরা কখনোই দিতাম না।’
তিনি আরও নিশ্চিত করেন, ২০২৪ সালের অনুমতি স্থগিতের আগে থেকেই কোনো কানাডীয় কোম্পানি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ইসরায়েলে মর্টার সরবরাহ করেনি।
অন্যদিকে, ওই প্রতিবেদনের অন্যতম সহযোগী সংগঠন প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্ট-এর প্রতিনিধিত্বকারী ইয়ারা শুফানি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সরকার অস্বীকার করলেও তথ্য-প্রমাণ বলছে, কানাডা এখনো ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।’
সংগঠনগুলো জানায়, তারা বাণিজ্যিক শিপিং ডকুমেন্ট এবং পণ্যের বিবরণ থেকে নিশ্চিত হয়েছে—ইসরায়েলে এখনো কানাডা থেকে সামরিক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
তবে কানাডা সরকারের সাফ কথা, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর এ ধরনের পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনো অবৈধতা থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত রয়েছে সরকার।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি