তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এসকিসেহির প্রদেশে ভয়াবহ দাবানলে অন্তত ১০ জন দমকল কর্মী ও উদ্ধারকর্মী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আরও ১৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। দেশটির কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় একাধিক জেলায় দাবানলের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
তুরস্কের কৃষি ও বনমন্ত্রী ইব্রাহিম ইউমাকলি বুধবার (২৩ জুলাই) এক বিবৃতিতে জানান, এসকিসেহিরে দাবানল নেভানোর সময় একদল উদ্ধারকর্মী আগুনের মধ্যে আটকা পড়েন। তাদের মধ্যে পাঁচজন বন বিভাগের কর্মী এবং পাঁচজন উদ্ধারকারী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
মন্ত্রী ইউমাকলি আরও জানান, হঠাৎ বাতাসের দিক পরিবর্তন হওয়ার ফলে আগুনের শিখা দমকল বাহিনীর সদস্যদের ঘিরে ফেলে। তারা দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০ জন মারা যান। বাকি ১৪ জন এখনও চিকিৎসাধীন।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম বিরগুন জানিয়েছে, আগুনে আটকে পড়া ওই দলটি কার্যত “জীবন্ত দগ্ধ” হয়েছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য নেবি হাতিপোগলু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় লিখেছেন, “আমাদের এই শোক প্রকাশের কোনো ভাষা নেই।”
প্রসঙ্গত, তুরস্কের বিলেজিক অঞ্চলের সেলচিক গ্রামে দাবানলের আগুন নতুন করে জ্বলে ওঠে সোমবার রাতে। পাশের সাকারিয়া প্রদেশ থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বিলেজিকের ওসমানেলি জেলায়, যেখানে বসতবাড়িগুলোর মধ্যেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলের ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, ঘরবাড়ি থেকে আগুন ও ধোঁয়া বেরোচ্ছে এবং দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
গত রোববার থেকে তুরস্কের বিভিন্ন অংশে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও দমকা হাওয়ার কারণে দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে ইস্তানবুল ও রাজধানী আঙ্কারার মধ্যবর্তী এলাকায়। বেশ কয়েকটি গ্রামে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় সেগুলো খালি করে দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী ইউমাকলি সতর্ক করে বলেছেন, বৃহস্পতিবার আরও তীব্র তাপমাত্রা ও হঠাৎ দিক পরিবর্তন করা বাতাসের পূর্বাভাস রয়েছে। তিনি বলেন, “আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে আমরা চরম আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে যাচ্ছি। ৮৬ মিলিয়ন নাগরিকের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা সবাই সতর্ক থাকুন এবং বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করুন।”
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, “আমাদের বন রক্ষায় যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং তাদের পরিবার ও সমগ্র জাতির প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”
এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে দু’জন প্রসিকিউটরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের আইনমন্ত্রী।
এই মৃত্যুর মাধ্যমে চলতি বছর এখন পর্যন্ত দাবানলে তুরস্কে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩ জনে। এর আগে জুলাই মাসের শুরুতে ইজমির প্রদেশের ওডেমিস শহরের কাছে দাবানলে এক বৃদ্ধ ও দুই বন কর্মী নিহত হন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তুরস্কে দাবানলের প্রকোপ বাড়ছে। এর আগেও ২০২১ সালে দেশটিতে ভয়াবহ দাবানলে অন্তত ৮ জন প্রাণ হারান এবং হাজার হাজার হেক্টর বনভূমি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
তুরস্ক সরকার বর্তমানে পরিস্থিতি মোকাবিলায় হেলিকপ্টার, ড্রোন ও শতাধিক দমকল বাহিনী মোতায়েন করেছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবিক ক্ষতির মাত্রা বিবেচনায় এই ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।