জাপানের শাসক জোট দেশটির উচ্চকক্ষে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে, তবে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা পদত্যাগের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় সময় রোববার (২০ জুলাই) ভোটাররা একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ভোট দেন, যা অনুষ্ঠিত হয়েছিল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) এবং তার জুনিয়র অংশীদার কোমেইতো জোটের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং মার্কিন শুল্কের হুমকি নিয়ে হতাশার মধ্যে।
রোববার (২০ জুলাই) ভোটগ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি গম্ভীরভাবে এই ‘কঠিন ফলাফল’ মেনে নিচ্ছেন, তবে তার ফোকাস বাণিজ্য আলোচনার দিকে।
গত বছর জাপানের শক্তিশালী নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর, এই পরাজয় জোটের প্রভাব আরও দুর্বল করবে। শাসক জোটের ২৪৮ আসনের উচ্চকক্ষে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে ৫০টি আসন প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তারা পেয়েছে মাত্র ৪৭টি।
অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ২২টি আসন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
উচ্চকক্ষের অর্ধেক আসনে রোববারের (২০ জুলাই) নির্বাচনে ভোট দেওয়া হয়েছিল, যেখানে সদস্যদের ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত করা হয়।
কান্ডা ইউনিভার্সিটি অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জাপান স্টাডিজের লেকচারার জেফ্রি হল বলেছেন, ডানপন্থী দলগুলোর প্রতি সমর্থন বাড়ায় এলডিপির রক্ষণশীল ভোটার ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইশিবাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অনেক সমর্থক যথেষ্ট রক্ষণশীল মনে করেন না। তারা মনে করেন, তার ইতিহাস সম্পর্কে জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নেই, আবের মতো চীনবিরোধী শক্ত অবস্থানও তার নেই।”
শিনজো আবে একসময় এলডিপির নেতা ছিলেন এবং জাপানের দীর্ঘতম সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন (২০০৬-২০০৭ ও ২০১২-২০২০)।
হল বলেন, দলের কিছু সমর্থন সানসেইতো পার্টির দিকে গেছে—যারা এখন এমন কিছু বলবে যা এর আগে উচ্চকক্ষের সদস্যরা প্রকাশ্যে বলেনি। যেমন—ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, বিদেশী-বিরোধী বক্তব্য এবং ইতিহাস সম্পর্কে শক্তিশালী সংশোধনবাদী দৃষ্টিভঙ্গি।
ইশিবার মধ্য-ডানপন্থী দল ১৯৫৫ সাল থেকে প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে জাপান শাসন করছে, যদিও নেতৃত্বে ঘনঘন পরিবর্তন হয়েছে।
এই ফলাফল ভোটারদের হতাশাকে তুলে ধরে, যারা ইশিবার নেতৃত্বে আস্থা হারাচ্ছেন। জাপান যখন অর্থনৈতিক সংকট, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য আলোচনার মুখোমুখি, তখন তিনি আস্থা জাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
অনেকে মূল্যস্ফীতি—বিশেষ করে চালের দাম—এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোর রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি নিয়েও অসন্তুষ্ট, যা এলডিপিকে নাজুক অবস্থায় ফেলেছে।
গত তিনজন এলডিপি প্রধানমন্ত্রী, যারা উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছিলেন, নির্বাচিত হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করেছিলেন। বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এই নির্বাচনে বড় ধরনের ক্ষতি হলে একই রকম ফলাফল দেখা যাবে।
এটি এলডিপির অন্যান্য নেতাদের নেতৃত্বের দৌড়ের পথ খুলে দেবে, যেমন—সানাই তাকাইচি (গত বছরের নেতৃত্ব নির্বাচনে ইশিবার কাছে দ্বিতীয় হয়েছিলেন), সাবেক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী তাকায়ুকি কোবায়াশি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমির পুত্র শিনজিরো কোইজুমি।
যাই হোক, শাসক দলের নেতৃত্ব পরিবর্তন নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করবে এবং মার্কিন-জাপান বাণিজ্য আলোচনার এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে জাপানের সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
সোমবার (২১ জুলাই) টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ একটি সরকারি ছুটির কারণে বন্ধ ছিল, তবে নির্বাচনের ফলাফল বিনিয়োগকারীদের মনে ভয় ধরিয়েছে।
সূত্র: বিবিসি নিউজ।