spot_img

বারবার তওবা করেও গুনাহ হয়ে গেলে করণীয় কি?

অবশ্যই পরুন

বিপথগামী হলে ফিরে আসার জন্য তওবা করা আবশ্যক। সহজ ভাষায় খারাপ কিছু থেকে ভালো পথে ফিরে আসাকেই তওবা বলা হয়। আর ইস্তিগফার অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা। পাপ বা গুনাহ হয়ে গেলে পবিত্র হতে মহান রবের কাছে তওবার বিকল্প নেই।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদারেরা, তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করো, আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে ঝর্ণাসমূহ প্রবহমান।’ (সুরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৮)

অপর আয়াতে মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আর যারা তওবা করেছে, শুধরে নিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। অতএব, আমি তাদের তওবা কবুল করবো। আর আমি তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৬০)

খোদ নবীজিও (সা.) নিষ্পাপ হওয়ার পরও দিনে ৭০ বারের বেশি তওবা ও ইস্তিগফার করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি- আল্লাহর কসম! আমি প্রত্যহ আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও বেশি ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮৬৮)

অন্যদিকে বান্দা খাস মনে তওবা করলে মহান রাব্বুল আলামিনও খুশি হন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালা বান্দার তওবার কারণে সেই লোকটির চাইতেও বেশি খুশি হন, যে লোকটি মরুভূমিতে তার উট হারিয়ে পরে তা আবারও পেয়ে যায়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮৭০)

তবে ভুলবশত হোক, কিংবা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে অনেকেই গুনাহ করার পর তওবা করলেও আবারও একই গুনাহ বা পাপ করে ফেলেন। পরে আবারও অনুতপ্ত হলে আবারও তওবা করেন। এভাবে বারবার তওবা করে আবারও গুনাহ করতে তওবা কবুল হবে কিনা, তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেন। অনেকে এতটাই অনুতপ্তবোধ করেন যে, তারা মনে করেন মহান রাব্বুল আলামিন বুঝি তাকে আর ক্ষমা করবেন না।

মনে রাখতে হবে, বারবার তওবার পরও গুনাহ করে ফেললে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। খাস মনে তওবা করার পরও শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আবারও গুনাহ হয়ে গেলে, অনুতপ্ত হয়ে উত্তমরূপে আবারও তওবা করে ফিরে আসতে হবে। সেই সঙ্গে একই পাপ বা গুনাহ যেন আর না হয় এজন্য দৃঢ় সংকল্প রাখতে হবে এবং সে অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। কোনোভাবেই মহান রাব্বুল আলামিনের রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী (সা.) আপনি বলে দিন- হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (সুরা যুমার, আয়াত: ৫৩)

অন্যদিকে আবু বাকর সিদ্দীক (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি ইস্তিগফারের (গোনাহে লিপ্ত হওয়ার পর লজ্জিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা) পরে তওবা করে, তবে তা ইসরার (বারবার) হিসাবে গণ্য হবে না, যদিও সে ব্যক্তি দৈনিক সত্তর বারও এরূপ করে। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১৫১৪)

মনে রাখতে হবে, আল্লাহর গুণবাচক নামের একটি হলো ‘তাওয়াব’। যার অর্থ ‘তাওবা কবুলকারী’ বা ‘অনুশোচনা গ্রহণকারী’। সুতরাং, বারবার গুনাহ হয়ে গেলেও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া চলবে না। বরং, গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়ামাত্র খাঁটি তওবা করে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।

সহিহ বুখারির একটি হাদিসেও এমনটা এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসটি হলো- আমি রাসুল (সা.) কে এ কথা বলতে শুনেছি- এক বান্দা গুনাহ করল। তারপর সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো গুনাহ করে ফেলেছি। তাই আমার গুনাহ মাফ করে দাও। জবাবে তার প্রতিপালক বললেন- আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার একজন প্রতিপালক রয়েছেন, যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমার বান্দাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। তারপর ওই ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল অবস্থান করলো এবং সে আবারও গুনাহে লিপ্ত হলো। তারপর আবারও বললো, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আবার গুনাহ করে বসেছি। আমার এ গুনাহ তুমি ক্ষমা করে দাও। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক বললেন- আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার একজন প্রতিপালক রয়েছে, যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমি আমার বান্দার গুনাহ মাফ করে দিয়েছি।

এরপর ওই ব্যক্তি আবারও আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুদিন অবস্থান করলো। তারপর আবারও সে গুনাহে লিপ্ত হয়ে গেল। পরে সে আবারও বললো, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আরও একটি গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ ক্ষমা করে দাও। তখন আল্লাহ বললেন- আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার একজন প্রতিপালক রয়েছেন, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শান্তিও দেন। আমি আমার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। নবীজি (সা.) এরূপ তিনবার বললেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৯৯৮)

সুতরাং, যতবার গুনাহ হবে ততবার ভুল উপলব্ধির সঙ্গে সঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে তওবা করতে হবে। সেই সঙ্গে আরও দৃঢ়ভাবে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে।

সর্বশেষ সংবাদ

চীনের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ভাটির দেশগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না: রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন আজ সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ