সাধারণত যে কোনো মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তবে গত ১০ জুলাই অধ্যাদেশ জারি হওয়া নতুন একটি আইনের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(ক) ধারায় তদন্ত চলাকালে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
এই অধ্যাদেশ জারির পাঁচ দিনের মাথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে শিশু হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজ (১৭)।
মামলার দায় থেকে শিশু ফাইয়াজের অব্যাহতি চেয়ে গত ১৩ জুলাই আদালতে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দাখিল করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগ।
পরবর্তীকালে গত ১৫ জুলাই ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াকের আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। ফলে এ আইনের প্রথম সুবিধাভোগী হলো শিশু ফাইয়াজ।
অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মোল্লা মো. খালিদ হোসেন বলেন, মামলার ঘটনার সঙ্গে শিশু ফাইয়াজের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। যেহেতু মামলাটির তদন্ত শেষ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, এ কারণে নতুন আইনে ফাইয়াজের অব্যাহতি চেয়ে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তবে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলবে।
ঘটনায় ফাইয়াজের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি
এ মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের অধিকাংশ বিএনপি, জামায়াত ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতা। ঘটনাস্থল রায়েরবাগের ফুট ওভারব্রিজ ও এর আশপাশের এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী উপস্থিতি ছিল। গত বছর ১৯ জুলাই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা ও পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে একজন আন্দোলনকারী শহীদ হন।
পরবর্তীকালে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে ফুট ওভারব্রিজের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। আর তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়। এ মামলায় পুলিশ আটজনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১৬ নম্বর আসামি শিশু হাসনাতুন ইসলাম ফাইয়াজকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যদিও প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণাদি ও পারিপার্শ্বিকতায় এ মামলার ঘটনায় আসামি শিশু হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
স্বাভাবিক পরিবেশে পড়ালেখা নিশ্চিত জরুরি
প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, তদন্তে ঘটনার সঙ্গে শিশু ফাইয়াজের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার দায় থেকে তাকে অব্যাহতি না দিলে সে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে শিশুটি পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডারে ভুগছে। এ ক্ষেত্রে তার চাপমুক্তভাবে বেড়ে ওঠা, স্বাভাবিক পরিবেশে পড়ালেখা নিশ্চিত করার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।
এ জন্য সরকার কর্তৃক জারি করা গেজেট অনুযায়ী ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৭৩(ক) ধারার আলোকে মামলা চলমান অবস্থায় অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিধান রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে শিশুটির সম্পৃক্ততার সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় মামলার দায় থেকে তাকে অব্যাহতি দিতে পুলিশ অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১৯ জুলাই পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিনকে হত্যা করে লাশ গুম ও মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় নিহতের ভগ্নীপতি মো. ফজল প্রধান বাদী হয়ে ২৪ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তারের পর শিশু ফাইয়াজকে ২৭ জুলাই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা অন্য আসামিদের সঙ্গে শিশু ফাইয়াজেরও ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেক আসামির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শিশু ফাইয়াজকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করা এবং তার রিমান্ড মঞ্জুর করার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে ২৮ জুলাই তার রিমান্ড বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে তাকে গাজীপুরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রেরণের আদেশ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরদিন গত বছর ৬ আগস্ট শিশু ফাইয়াজ কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে জামিনে মুক্ত হয়।
সূত্র: কালের কণ্ঠ