প্রাপ্তি মানুষের জন্য যেমন আনন্দের, তেমনি অপ্রাপ্তি আফসোসের একটি কারণ। মানুষ ভবিষ্যতের বিষয়ে বিস্তর প্রত্যাশা করে কিন্তু, প্রত্যাশা প্রাপ্তিতে পরিণত না হলে মানুষ করে আফসোস। আরও চাই! আরও চাই! এটা যেমন মানুষের পিছু ছাড়ে না ঠিন তেমনি না পাওয়ার যন্ত্রণাও তাকে সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়ায়। মানুষের এ আফসোস দুনিয়ার জীবন পেরিয়ে মৃত্যুর পরেও অব্যাহত থাকবে, কিন্তু পূরণ হবে না। এ আফসোস থেকে রক্ষা করাই এ প্রবন্ধের লক্ষ্য।
১. হায়! যদি আবার পৃথিবীতে ফিরে যেতাম : দীর্ঘ কবরের জীবন শেষে কিয়ামতের পরে হাশরের কঠিন ভয়বহতা দেখে অবিশ্বাসীদের কপালে ভাঁজ পড়ে যাবে। মানুষ যখন তার পাপের দরম্নণ ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে, সূর্য ছড়াবে প্রচণ্ড উত্তাপ, আমলনামা অবিশ্বাসীদের বাম হাতে দেওয়া হবে তখন তারা দুনিয়ার কৃতকর্মের জন্য আফসোস করবে। পৃথিবীতে ফিরে আসার আকুতি করে বলবে—‘হায়! আমাদের যদি আবার দুনিয়ায় পাঠানো হতো! তাহলে আমরা আমাদের রবের আয়াতগুলো অস্বীকার করতাম না এবং ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম।’ (সুরা আল-আনআম, আয়াত : ২৭)
২. হায়! যদি এ জীবনের জন্য কিছু করতাম : পার্থিব জীবনে আরাম আয়েশের জন্য গাড়ি-বাড়ি সম্পদের পাহাড় তৈরিতে মরিয়া হয়ে যায় মানুষ। কিন্তু ক্ষণস্থায়ী এ জীবনের তুলনায় পরকালের অনন্ত জীবনের কোনো প্রস্তুতিই নেওয়া হয় না। তাই মৃত্যুর পরে আফসোস করার চেয়ে সময় থাকতে আখিরাতের জন্য কিছু সঞ্চয় করা বুদ্ধিমানের কাজ। নতুবা আফসোস করে বলতে হবে : ‘সে (মানুষ) বলবে—হায়! এ জীবনের জন্য আমি যদি কিছু অগ্রিম প্রেরণ করতাম!’ (সুরা আল-ফাজর, আয়াত : ২৪)
৩. হায়! যদি ভালো বন্ধু বা নেতা নির্বাচন করতাম : মানুষ তার জীবন পরিচালনার জন্য আদর্শ হিসেবে কোনো বন্ধু, নেতা বা বিভিন্ন তারকাদের অনুসরণ করে থাকে। দুনিয়ার এ বন্ধু বা নেতার আদর্শই যেন তার উন্নতির চাবিকাঠি। অথচ অধিকাংশ সচেতন ও শিক্ষিত মানুষ কোনো মুমিন ব্যক্তিকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে না। এ ধরনের চোখ থাকতেও অন্ধ প্রকৃতির মানুষেরা আফসোস করে বলবে : ‘হায় আমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।’ (সুরা আল-ফুরকান, আয়াত : ২৮)
তারা আমলনামার এ কিতাব দেখে নিজেদের নিশ্চিত শাস্তির কথা জেনে আরও আফসোস করে বলবে : ‘যখন তার আমলনামা বাম হাতে দেওয়া হবে, তখন সে বলবে—হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া হতো। আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব।’ (সুরা আল-হাক্কাহ, আয়াত : ২৫-২৬)
৫. হায়! মৃত্যুই যদি পরিসমাপ্তি হতো : মানুষ দুনিয়ার জীবনকে সুসজ্জিত করতে গিয়ে আখিরাতের অনন্তকালের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়। ফলে, সংগত কারণেই সুসজ্জিত করে গড়া পৃথিবীর বাড়ি ছেড়ে ধ্বংস করা আখিরাতের জীবনকে মানুষ অপছন্দ করে। কিন্তু জন্মগ্রহণ করা প্রতিটি প্রাণীকেই যে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। তাই মৃত্যুর পর হাশরের ময়দানে নিজের আমলনামা দেখে শাস্তি থেকে বাঁচার কোনো উপায় না পেয়ে বলবে—‘হায়! মৃত্যুই যদি আমার (সবকিছুর) শেষ হতো। আমার সম্পদ আমার কোনো উপকারে আসল না। আমার ক্ষমতাও বরবাদ হয়ে গেল।’ (সুরা আল-হাক্কাহ, আয়াত : ২৭-২৯)
সুস্থ ও বিবেকমান মানুষের জন্য হতাশা কিংবা আফসোস শোভনীয় নয়। আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে বিবেককে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের পরকালীন আফসোস ও হতাশা থেকে মুক্ত করে অনন্তকালীন জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামত উপভোগ করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : শিলমঘক, প্যারামাউন্ট স্কুল এন্ড কলেজ, রাজশাহী।