কারও প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ কিংবা রাগ থেকে তার অমঙ্গল কামনা করা গর্হিত কাজ। সাধারণভাবে যাকে আমরা অভিশাপ বলে থাকি। শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গিতে কাউকে অভিশাপ দেয়া গুনাহের কাজ।
তবে বর্তমান সময়ে অনেকেই ছোট ছোট বিষয়েও একে-অপরকে অভিশাপ দিয়ে থাকেন। আবার কখনো কখনো সন্তানের কোনো কাজের জন্য বাবা-মাও তাদের লানত বা অভিশাপ করে থাকেন। অবলীলায় অনেকে এমনটা করে থাকলেও কাউকে অভিশাপ দেয়ার ক্ষেত্রে কিন্তু কঠোর নিষেধ রয়েছে।
সামুরা ইবন জুন্দুব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা পরস্পরে আল্লাহর লানত, তার গজবের বা জাহান্নামের অভিশাপ দেবে না। (তিরমিজি, হাদিস: ১৯৮২)
অভিশাপ করা যে মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না- খোদ নবীজিও (সা.) এমনটা বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- একজন পরিপূর্ণ মুমিন অধিক অভিসম্পাতকারী (অভিশাপকারী) হতে পারে না। (মেশকাত, হাদিস: ৪৮৪৮, সুনান আত তিরমিজি, হাদিস: ২০১৯)
এমনকি ইসলামে কাউকে অভিশাপ করাকে হত্যার সমতুল্য কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। সাবিত ইবনু যাহহাক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন- কোনো ব্যক্তি কোনো মুমিনের ওপর অভিশাপ দিলে তা তাকে হত্যা করারই শামিল হবে। আর কোনো মুমিনকে কাফির বলে অপবাদ দিলে, তাও তাকে হত্যা করারই মতো হবে। (সহিহ বুখারি, ৫৬২১)
আবার কাউকে অভিশাপ করার পরিণামও ভয়াবহ। কারণ, যাকে অভিশাপ করা হয় ওই ব্যক্তি যদি তার যোগ্য না হয়, তবে সেই ব্যক্তির ওপরই ওই অভিশাপ পতিত হয়। ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, একবার এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) এর সামনে বাতাসকে লানত (অভিশাপ) করে। তখন রাসুল (সা.) বলেন, তুমি বাতাসকে লানত দেবে না। কেননা এ জন্যই নির্দেশিত। কেউ যদি কোনো বস্তুকে লানত দেয়, আর সে বস্তু যদি ওই লানতের পাত্র না হয়, তবে সেই লানত, লানতকারীর দিকেই ফিরে আসে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬১৯; তিরমিজি, হাদিস: ১৯৮৪)
এছাড়া আবুদ্ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে এসেছে, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি (নবীজি) বলেছেন- যখন বান্দা কোনো বস্তুকে অভিশাপ করে, তখন এ অভিশাপ আকাশের দিকে উঠে যায়। আর এ অভিশাপের জন্য আকাশের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর ওই অভিশাপ জমিনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তার জন্য জমিনের দরজাও বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর ডানদিক-বামদিকে যায় এবং যখন সেখানেও কোনো রাস্তা পায় না, শেষ পর্যন্ত সে (অভিশাপ) ওই ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে, যাকে অভিশাপ করা হয়েছে। যদি সে অভিশাপের উপযুক্ত হয়, তবে তার ওপর আপতিত হয়। আর যদি সে অভিশাপের উপযুক্ত না হয় তাহলে অভিশাপকারীর দিকেই ফিরে আসে। (মেশকাত, হাদিস: ৪৮৫০)
সুতরাং, মুমিনের উচিত পরকালে সফল হতে অভিশাপের মতো গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকা। কারণ, পবিত্র কুরআনে খোদ মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘যদি তোমরা নিষিদ্ধ কাজের বড় বড়গুলো থেকে বিরত থাকো, তাহলে আমি তোমাদের ছোট ছোট পাপগুলো ক্ষমা করে দেবো এবং তোমাদের এক মহা-মর্যাদার স্থানে প্রবেশ করাবো।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭৬)।