গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে আন্দোলনে যুক্ত থাকার ‘মূল্য’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে শতাধিক দিন আটক থাকার পর এবার ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল। তার আইনজীবীরা মিথ্যা অভিযোগে কারারুদ্ধ করা, বেআইনিভাবে আটক, মানহানি এবং ‘ইহুদিবিদ্বেষী হিসাবে অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগ তুলে এই আবেদন করেছেন।
চলতি বছরের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের বাসা থেকে খলিলকে অভিবাসন এজেন্টরা গ্রেপ্তার করে এবং লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে ১০০ দিনের বেশি সময় তাকে আটক রাখা হয়। ৩০ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি গত বছর গাজায় যুদ্ধের সময় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া তুমুল আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন। মার্কিন প্রশাসন দাবি করেছিল, খলিলের কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির জন্য ‘বিপজ্জনক’ হওয়ায় তাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া দরকার।
তবে, গত ২০ জুন নিউ জার্সির এক ফেডারেল বিচারকের রায়ে খলিল জামিনে মুক্তি পান। বিচারক বলেছিলেন, খলিলের পালিয়ে যাওয়ার বা সমাজের জন্য হুমকি হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই।
মুক্তি পাওয়ার পরপরই খলিল ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। আদালতে দাখিল করা নথিতে তিনি আইনি ও চরম মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন এবং এর জন্য তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে দায়ী করেছেন। নথিতে বলা হয়েছে, রুবিও এক সিদ্ধান্তে খলিলকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী’ আখ্যা দিয়ে তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন। খলিলের আইনজীবীরা এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে এটি গাজায় ‘ইসরায়েলের গণহত্যার’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে টার্গেট করেছে। (বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে)।
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন অবশ্য খলিলের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে “ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্বেষমূলক আচরণ” করার অভিযোগ এনেছেন।
মার্কিন এক সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খলিল বলেন, “তারা আমার বিরুদ্ধে যা করতে চেয়েছিল, সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমার যা ক্ষতি হওয়ার তাতো হয়ে গেছে। এই ঘটনার একটা জবাবদিহি দরকার। সেটা না হলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের কাজ চলতেই থাকবে।” তিনি হয় ২ কোটি ডলার, না হয় ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চেয়েছেন।
খলিল গ্রেপ্তার হওয়ার সময় তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা ছিলেন এবং তিন মাস আটক থাকায় তিনি তার প্রথম সন্তানের জন্মের মুহূর্তে স্ত্রীর পাশে থাকতে পারেননি। সিরিয়ায় বেড়ে ওঠা ফিলিস্তিনি শরণার্থী মাহমুদ খলিল ছিলেন নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা। তার আলজেরিয়ার নাগরিকত্ব আছে এবং গত বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি পান। তার স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। খলিলের সঙ্গে আরও দুই বিদেশি শিক্ষার্থী—তুরস্কের রুমেইসা ওজতুর্ক ও ভারতের বাদর খান সুরি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, যারা পরে মুক্তি পান।