শ্বশুর-শাশুড়ির সেবাযত্ন করা পুত্রবধূদের পারিবারিক দায়িত্ব হিসেবে মনে করা হয়। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবাযত্ন করা পুত্রবধূর জন্য ঐচ্ছিক বিষয়। এ জন্য কাউকে বাধ্য করার অনুমতি শরিয়ত কাউকে দেয়নি।
পুত্রবধূ ও শ্বশুর-শাশুড়ির সম্পর্কের দায়িত্বগুলো কখনো একপক্ষীয় নয়। সন্তানের যেমন মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয়। মা-বাবারও তেমন সন্তানের জন্য অনেক কিছু করতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যেটা হয়, উভয়পক্ষ যখন নিজের অধিকার আর পাওনাগুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করে এবং কর্তব্যগুলো ভুলে যায়- তখনই সংসারে কলহ ও দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়।
শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা ও ননদ-দেবরদের কোনো কাজে সহযোগিতা করা পুত্রবধূর দায়িত্ব নয়। বরং এটি তার একটি অতিরিক্ত কাজ। কিন্তু বর্তমান সমাজে বিষয়টাকে এমনভাবে দেখা হয় যে, যেন এটি তার অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। বিভিন্ন পরিবারের অবস্থা তো এমন যে, ছেলের জন্য বউ আনা হয় কেবল শ্বশুর-শাশুড়ির সেবার জন্য। ইসলামের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। মা-বাবার সেবা-শুশ্রূষা করা সন্তানের দায়িত্ব- কোনোভাবেই পুত্রবধূর নয়। (আল-বাহরুর রায়েক : ৪/১৯৩; কিফায়াতুল মুফতি : ৫/২৩০)
শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমতের প্রয়োজন দেখা দিলে, স্বামী নিজ কর্তব্যে তাদের সেবা-যত্ন করবেন। স্ত্রী যদি সন্তুষ্টচিত্তে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সেবা করে সেটা প্রশংসনীয়। বিনিময়ে তিনি বিপুল সওয়াব পাবেন। তবে একটা কথা স্মরণ রাখতে হবে, এসব করতে পুত্রবধূ আইনত বাধ্য নয়।
পুত্রবধূর কর্তব্য হলো নৈতিকতাবোধ ও দায়বদ্ধতা রক্ষা করা। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের কাছেই পরিষ্কার থাকতে হবে, কার দায়িত্ব কতটুকু এবং নৈতিকতার চাহিদা কী? নৈতিকতার ভিত্তিতে পুত্রবধূ যা করবে- তা মর্যাদার চোখে দেখতে হবে। তার আন্তরিকতা ও সহযোগিতাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে নিতে হবে।
ইসলাম ও নৈতিকতাবোধের দাবি হচ্ছে যে, স্ত্রী স্বামীর বাবা-মাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান দেবেন। তাদের প্রতি সমীহের চোখে দেখবেন। মনেপ্রাণে তাদের ভালোবাসবেন। তাদের সেবা-যত্নকে নিজের জন্য পরম সৌভাগ্য মনে করবেন। অনুরূপ শ্বশুর-শাশুড়িরও কর্তব্য হলো- পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো আদর ও মমতায় আবদ্ধ করা। তার সুখ, আনন্দ ও সুবিধার প্রতি সবিশেষ মনোযোগ দেয়া।
এ বিষয়ে মুফতি এহসানুল হক জিলানী বলেন, পুত্রবধূ শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করার বিষয়ে ইসলামে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। তিনি নিজের বাবা-মাকে যেভাবে সেবা করেন, তেমনি শ্বশুর-শাশুড়িকেও সেবা করবেন। ইসলামে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করার বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে।