ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা দীর্ঘদিনের। তবে এই উত্তেজনা বহুবার ছায়া ফেলেছে দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ওপরও। বিশেষ করে সাম্প্রতিক পেহেলগাম জঙ্গি হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ভারত সরকারের কড়া অবস্থানের কারণে পাকিস্তানি শিল্পীদের ভারতে আসা এখন নিষিদ্ধ, এমনকি সামাজিক মাধ্যমে তাদের উপস্থিতিও ভারতে সীমিত।
তবে কয়েক বছর আগেও চিত্রটা ছিল একেবারে ভিন্ন। পাকিস্তানি শিল্পীরা বলিউডে নিয়মিত কাজ করতেন, আর পাকিস্তানের সাধারণ মানুষদের কাছে হিন্দি সিনেমা ছিল আবেগের জায়গা। শাহরুখ খান, মাধুরী দীক্ষিত থেকে শুরু করে কারিনা কাপুর খানের জনপ্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো।
এই প্রেক্ষাপটেই বলিউড অভিনেত্রী কারিনা কাপুর খান মাঝেমধ্যেই আলোচনায় উঠে আসেন। তিনি নিজেই একাধিকবার বলেছেন, তাকে পাকিস্তানি বলে “দিব্যি চালিয়ে দেওয়া” যেতেই পারে। এক পুরোনো সাক্ষাৎকারে কারিনা বলেছিলেন ‘আমি ক্যারিয়ারের শুরুতেই পাকিস্তানি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। তাই হয়তো আমাকে পাকিস্তানি বলে দিব্যি চালিয়ে দেওয়া যায়।’
কারিনার এই মন্তব্য যদিও অনেকেই মজার ছলে নিয়েছিলেন, তবুও তা বিতর্কের জন্ম দেয়। তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘রিফিউজি’-তেও তিনি পাকিস্তানি তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে ‘কুরবান’ সিনেমাতেও দেখা গেছে একই ধরনের ভূমিকায়। শুধু চলচ্চিত্র নয়, বাস্তব জীবনেও পাকিস্তানের সঙ্গে তার কিছু পারিবারিক সংযোগ রয়েছে।
এক অনুষ্ঠানে কারিনা জানান, তার স্বামী সাইফ আলি খানের কিছু আত্মীয় এখনও পাকিস্তানে বসবাস করেন এবং তারা মাঝে মাঝেই ফোন করে আমন্ত্রণ জানান। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘সময়-সুযোগ হলে আমি অবশ্যই পাকিস্তানে যেতে চাই। বিশেষ করে পাকিস্তানের শিশুদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে চাই।’
সম্প্রতি আরেকটি ঘটনা নিয়ে আবারও বিতর্কে পড়েন কারিনা কাপুর। কয়েক মাস আগে তিনি দুবাইয়ে পাকিস্তানি ফ্যাশন ডিজাইনার ফারাজ মানান–এর একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ফারাজের সঙ্গে এর আগেও একাধিকবার কাজ করেছেন কারিনা। তবে এই সফর নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয় কারণ, একই সময়েই পেহেলগামে ঘটে জঙ্গি হামলা। এরপর অনেক ভারতীয় নেটিজেন প্রশ্ন তোলেন—এমন স্পর্শকাতর মুহূর্তে পাকিস্তানি শিল্পীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কি যুক্তিযুক্ত?
যদিও সময়ের সঙ্গে সেই বিতর্ক অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে। তবে এ থেকেই আবারও স্পষ্ট, দুই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যতই জটিল হোক না কেন, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক, ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও মানবিক আকাঙ্ক্ষা বারবার সেই সীমারেখা অতিক্রম করতে চায়।