সর্বকালের সেরা আদর্শ প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) উম্মতদের যেমন প্রকৃত মুসলিমের আচার-ব্যবহারের শিক্ষা দিয়েছেন, তেমনি পরকালে সফল হওয়ার রাস্তাও বাতলে দিয়েছেন। তার আদর্শ ও সুন্নত অনুসরণ প্রত্যেক মুমিনের জন্য অপরিহার্য। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসুলের আনুগত্য করো। আর তোমরা তোমাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করো না। (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত: ৩৩)
অপর আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘হে নবী আপনি তাদের বলে দিন- যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (সুরা আল-ইমরান, আয়াত: ৩১)
কাজেই পরকালে সফলকাম হতে যেমন প্রিয়নবীর (সা.) আদর্শ অনুসরণ জরুরি, তেমনি জীবদ্দশায় নবীজির দেয়া নানা আদেশ-উপদেশও মেনে চলা মুমিনের কর্তব্য। বিভিন্ন হাদিসে উম্মতদের জন্য রাসুল (সা.) এর দেয়া নানা দিক-নির্দেশনার কথা বর্ণিত হয়েছে। এরমধ্যে আছে বান্দার হক নষ্ট করার বিষয়টিও।
হক মূলত দুই প্রকার। একটি হলো আল্লাহর হক। অর্থাৎ, আল্লাহ যেসব আদেশ-নিষেধ করেছেন সেগুলো পালন করা। যেমন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, রোজা রাখা ইত্যাদি। আর দ্বিতীয়টি হলো বান্দার হক, যেমন- ইসলামে প্রতিবেশীর হক আদায়ের কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, আল্লাহর হক আদায় না করলে মহান রব চাইলেই ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু বান্দার হক নষ্ট করলে, যার হক নষ্ট করা হয়েছে ওই ব্যক্তি ক্ষমা না করা পর্যন্ত আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।
এ কারণে ইসলামে বান্দার হক নষ্ট করার বিষয়ে কঠোর নিষেধ রয়েছে। এর জন্য পরকালেও আছে ভয়ংকর শাস্তি। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি কসমের (মিথ্যা কসম) মাধ্যমে কোনো মুসলিমের হক বিনষ্ট করে তার জন্য আল্লাহ জাহান্নাম অবধারিত করে রেখেছেন এবং জান্নাত হারাম করে রেখেছেন। এ সময় জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসুল! অতি সামান্য বস্তু হলেও? জবাবে রাসুল (সা.) বলেন, আরাক গাছের (বাবলা গাছের মতো এক ধরনের কাঁটাযুক্ত গাছ) ডাল হলেও এ শাস্তি দেয়া হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৫২)
তবে কারও হক নষ্ট করে ফেললে করণীয় কি, তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় পড়েন। আবার হক আদায়ের আগেই যদি কেউ মারা যায় তাহলে কীভাবে মাফ পাওয়া যাবে এমন প্রশ্নও করেন অনেকে।
ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহর মতে, যার হক নষ্ট করা হয়েছে তিনি যদি মারা যান তাহলে তার পরিবার-পরিজনের কাছে তার হক পৌঁছে দিতে হবে। আর যদি কারও হক যিনি নষ্ট করেছেন তিনিই মারা যান, সে ক্ষেত্রে তার অভিভাবক বা ওয়ারিশদের সেই হক আদায় করে দিতে হবে।