spot_img

হাদিস অস্বীকার করা মহাপাপ

অবশ্যই পরুন

হাদিসের প্রামাণ্যতা অকাট্য এবং এ অকাট্যতার সমর্থনে পবিত্র কোরআন ও হাদিসেই সুষ্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। পবিত্র কোরআন যেমন ওহি, তেমনি হাদিসও একরকমের ওহি। মূলতঃ কোরআনকে যদি থিওরি বলা হয়, তাহলে হাদিস তার প্র্যাক্টিক্যাল। যারা বলবেন যে কোরআন মানি কিন্তু হাদিস মানি না, তারা তো কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ ও ইসলামি মূল্যবোধ-ই অস্বীকারকারী।

হিজরি দ্বিতীয় শতকের শেষের দিকে মুতাযিলা সম্প্রদায় হাদিসকে অস্বীকারের দুঃসাহস দেখায়। মুতাযিলা সম্প্রদায়ের হাদিসকে অস্বীকার করার এ ধারা এখনো ইসলাম বিদ্বেষীরা সযত্নে লালন করছে! ইদানিং কিছু জ্ঞানপাপী ও ইসলামবিদ্বেষী বলতে চান হাদিস তো মানুষে লিখিছে। হাদিস তো তিন চার শ বছর পরে লেখা হয়েছে!

শরিয়তের বিধান হলো হাদিসকে অস্বীকার করা কুফরি। পবিত্র কোরআনের প্রায় অর্ধশত আয়াতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্যের নির্দেশনা এবং তাঁর অবাধ্যতার প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে…’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ২১)।

রাসুলের আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে মহান আল্লাহর বিধান পালনের সার্থকতা ও ঈমানের সম্পর্ক “আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো, যদি তোমরা মুমিন হও” (সুরা আনফাল, আয়াত: ১)। রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর জীবনে যা কিছু বলেছেন ও করেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং তাঁরই নির্দেশে-ই বলেছেন ও করেছেন। পবিত্র কোরআনের ভাষায়, “তিনি কোনো মনগড়া কথা বলেন না। তা তো কেবল ওয়াহি, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়” (সুরা নাজম, আয়াত: ৩-৪)।

মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (স.)-কে পৃথিবীতে প্রেরণের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে বলেন “অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসুল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদের পরিশুদ্ধ করে আর তাদের কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেয়…” (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১৬৪)। রিসালাতের উদ্দেশ্যই হলো
    কোরআনের বিধান পাঠ করে শোনানো,
    মানবজাতির চরিত্র, আমলের পরিশুদ্ধতা ও পরিপূর্ণতা দান করা,
    মানবজাতিকে কোরআনের ব্যাখ্যা করে বোঝানো,
    হিকমাহ (অধ্যাত্ম জ্ঞান-প্রজ্ঞা) শিক্ষা দেওয়া।

হাদিস কোরআনুল কারিমের পর ইসলামের অন্যতম নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র। রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর নবুয়তি জীবনের কথা ও কাজের মাধ্যমে কোরআনেরই ব্যাখ্যা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, “আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি কোরআন, যাতে আপনি মানুষকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে পারেন…” (সুরা নহল, আয়াত: ৪৪)।

সত্য হলো, যিনি কথা ও কাজের মাধ্যমে আমল পরিশুদ্ধ করবেন, ব্যাখ্যা ও হিকমাহ শিক্ষা দেন, তাঁর সব কথা ও কাজ প্রামাণ্য হিসেবে গণ্য হবে এটাইতো স্বাভাবিক। এ ছাড়াও সুরা আল ইমরান, আয়াত: ৩২, নিসা ১৪, ৮০, ১১৫, নুর ৫৪, আহজাব ৩৬, ৭১, মুহাম্মাদ ৩৩-সহ অসংখ্য আয়াতে এ মর্মে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

অতএব সন্দেহাতীত ভাবেই বলা যায়, যে হাদিস অস্বীকার করলো; সে তো কোরআনকেই অস্বীকার করলো। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “আমার উম্মতের সব লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু যে অস্বীকার করেছে (সে জান্নাতবাসী হতে পারবে না)। জিজ্ঞাসা করা হলো কে অস্বীকার করেছে, হে রাসুল, উত্তরে তিনি বললেন ‘যে আমার অনুসরণ করলো সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অনুসরণ করলো না, সে-ই অস্বীকারকারী’ (বুখারি)।

হাদিস অস্বীকৃতি উদ্দেশ্য হতে পারে অবিশ্বাসমূলক কিংবা অপব্যাখ্যামূলক। অবিশ্বাসমূলক অস্বীকৃত ক্ষেত্রে ব্যক্তি কাফের মুরতাদ (ইসলাম ত্যাগকারী); এমন ব্যক্তির সঙ্গে আত্মীয়তা করা, তার পিছনে নামাজ পড়া জায়েজ হবে না।

হাদিস অস্বীকার করাটা যদি অপব্যাখ্যামূলক হয় তাহলে ঐ ব্যক্তি বিদআতি, পথভ্রষ্ট ও মহাপাপী গণ্য হবে। বস্তুতঃ ঐ সব জ্ঞানপাপীরাই হাদিসের প্রামাণ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কুতর্কে জড়ান; যারা মূলতঃ হাদিসশাস্ত্র সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। রাসুলুল্লাহ (সা.) পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তিত্ব যাঁর জীবনালেখ্যকে কেন্দ্র করে বিকশিত হয়েছে: হাদিসশাস্ত্র, সিরাত সংকলন, মাকতুবাত, আসমা রিজালশাস্ত্র, উসুলে হাদিস, জরাহ-তা’দিল ইত্যাদি। হাদিস সংরক্ষণ, সংকলন সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা রাখা কোনো ব্যক্তি হাদিসের অকাট্যতা অস্বীকার করতে পারেন না।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর ১৭৩০

সর্বশেষ সংবাদ

সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নবীন কর্মকর্তাদের সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে: সেনাপ্রধান

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নবীন কর্মকর্তাদের সর্বদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। রোববার (২২ জুন) সকালে চট্টগ্রামে...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ