বুকের ব্যথা, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ও শ্বাসকষ্টের মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া টাকোৎসুবো কার্ডিওমায়োপ্যাথি—যাকে অনেক সময় ‘ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম’ বলা হয়। এটি মূলত অতিরিক্ত শারীরিক বা মানসিক চাপের কারণে হয়ে থাকে।
একটি ২০২১ সালের কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, বেইজিংয়ের পেকিং ইউনিভার্সিটি ফার্স্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৫৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি হঠাৎ তীব্র বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করেন। চার মাস আগে তার মূত্রাশয়ে ক্যান্সার অপসারণ করা হয়েছিল। পরিবারের সামনে তিনি সবকিছু স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করলেও, অন্তরে ক্যান্সার ফিরে আসার আশঙ্কায় তিনি দারুণ মানসিক চাপে ছিলেন।
চিকিৎসকেরা জানান, তিনি টাকোৎসুবো কার্ডিওমায়োপ্যাথিতে ভুগছিলেন। সাধারণত এই ব্যাধিটি নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে ২০২৪ সালের মে মাসে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পুরুষদের জন্য এই রোগটি আরও প্রাণঘাতী হতে পারে।
এই গবেষণায় ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে টাকোৎসুবো কার্ডিওমায়োপ্যাথিতে ভর্তিকৃত প্রায় ২ লাখ রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। রোগীদের ৮৩% নারী হলেও, মৃত্যুর ঝুঁকি পুরুষদের ক্ষেত্রে দ্বিগুণেরও বেশি—প্রায় ১১.২% মৃত্যুহার।
কেন পুরুষরা বেশি ঝুঁকিতে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হরমোনগত পার্থক্য এই ব্যবধানের একটি বড় কারণ হতে পারে। চাপের সময়ে শরীরে যে স্ট্রেস হরমোন (ক্যাটেকোলামিন) নিঃসৃত হয়, তা হৃদযন্ত্রকে সাময়িকভাবে অচল করে দিতে পারে।
পুরুষদের শরীরে নারীদের তুলনায় এই হরমোন বেশি নিঃসৃত হয়, যা হয়তো তাদের ক্ষেত্রে রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়।
নারীদের শরীরে উচ্চমাত্রায় উৎপন্ন ইস্ট্রোজেন হরমোন হৃদযন্ত্রের জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতে পারে, যা চাপের সময় হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে।
তাছাড়া, সামাজিক দিক থেকেও পার্থক্য রয়েছে। অনেক সময় চিকিৎসকরা মনে করেন এই রোগটি নারীদেরই হয়, ফলে পুরুষদের ক্ষেত্রে ভুল নির্ণয়ের কারণে চিকিৎসা বিলম্বিত হয়, যা মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। পুরুষরাও অনেক সময় দেরিতে হাসপাতালে আসেন, ভেবে যে অসুস্থতা সামলে যাবে।
সমাধান কী?
চিকিৎসকেরা বলেন, হঠাৎ বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হলে তা কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। এই লক্ষণগুলোকে হার্ট অ্যাটাক ভেবে অবিলম্বে জরুরি চিকিৎসা নিতে হবে।
এছাড়া, প্রতিদিনের জীবনে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট যেমন মেডিটেশন বা ব্যায়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং মানসিক স্থিতি গড়ে তোলে।
টাকোৎসুবো বা ভাঙা হৃদয়ের ব্যাধি নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক হতে পারে, তবে পুরুষদের জন্য এটি বেশি প্রাণঘাতী হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। শারীরিক লক্ষণগুলো অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করাই ভালো।
খবর: সিএনএন